(চার) বেশি বেশি দু’আ, যিকির ও ইসতিগফার
আল্লাহ তায়ালা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا (41) وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا (42)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশি করে আল্লাহর যিকির কর (৪১) আর সকাল ও সন্ধায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর। (৪২) {সূরা আহযাব}
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফছীরে মুয়াচ্ছারে বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! (যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সত্যায়ন কর এবং তাঁর শরীয়তের উপর আমল কর) তোমরা তোমাদের ক্বলব দ্বারা, মুখ দ্বারা এবং সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা বেশি বেশি করে আল্লাহর যিকির কর। আর সকাল, সন্ধা সব সময় আল্লাহর যিকিরে মাশগুল থাকো। বিশেষ করে সকাল সন্ধা, প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে, সকল সমস্যা ও সংকটে আল্লাহ তায়ালার স্মরণে লিপ্ত থাকো। কারণ এটা শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদাত। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালার মাহাব্বাত লাভ হয়, গোনাহ থেকে যবান হিফাজাত থাকে আর সর্ব প্রকার কল্যাণ অর্জিত হয়। (আল মুয়াচ্ছার)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, فَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ (39) وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَأَدْبَارَ السُّجُودِ (40)
অতঃপর আপনি তারা যা বলে তার উপর ধৈর্য্যধারণ করুন আর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন। আর রাতের কিয়দাংশে ও সালাতসমুহের পরে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন। (সূরা ক্বফ, আয়াত নং ৩৯,৪০)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِينَ (الأعراف 205)
আর স্বীয় রবকে স্মরণ করতে থাকেন আপন মনে, ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং চিৎকার না করে সংগোপনে; সকালে ও সন্ধায়। আর আপনি গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। (সূরা আ’রাফ, আয়াত নং ২০৫)
হযরত রসূলুল্লাহ (স.) বলেন,
18 – حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ خَالِدِ بْنِ سَلَمَةَ يَعْنِي الْفَأْفَاءَ، عَنِ الْبَهِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ» — ابو داود
হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) প্রত্যেক মুহুর্তে আল্লাহর যিকির করতেন। (আবু দাউদ, হাদীছ নং ১৮)
আলবানীর তাহকীকঃ হাদীছটি সহীহ।
এই হাদীছটি বুখারী, মুছলিম, তিরমিযীসহ একাধিক হাদীছগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ (191) رَبَّنَا إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ (192) رَبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ (193) رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدْتَنَا عَلَى رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ (194) فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّي لَا أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِنْكُمْ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى —(195)
যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকির করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও যমীনের সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে) হে আমাদের রব এসব আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আমাদিগকে আপনি জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচান। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই যাকে আপনি জাহান্নামে নিক্ষেপ করলেন, তাকে সর্বদাই অপমানিত করলেন, আর জালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের রব! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে আহবান করতে, তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আনঃ তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! অতএব আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেন এবং আমাদের সকল দোষত্রুটি দূর করে দেন, আর নেকলোকদের সাথে আমাদের মৃত্যুদান করেন। হে আমাদের রব! আমাদেরকে দান করেন যা আপনি ওয়াদা করেছেন আপনার রসূলগণের মাধ্যমে এবং কিয়ামাতের দিন আমাদিগকে অপমানিত করবেন না। নিশচয়ই আপনি ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দু’আ এই বলে কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমকে নষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক।
# যারা সর্ব হালাতে যিকির করে, আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে ও আল্লাহ তায়ালার কাছে দু’আ করে আল্লাহ তায়ালা তার দু’আকে কবুল করে নেন। তার এই প্রচেষ্টা (আমাল) বৃথা যায় না। পুরুষ হোক আর মহিলা হোক সবাই’র দু’আকে আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নেন। এই আমলটি সারা বছরের জন্যে। এর শুরু হোক এই রমাদান থেকেই। আল্লাহ কবুল করেন। আমীন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ (غافر\مؤمن 60)
তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাক আমি সাড়া দিব। যারা আমার ইবাদাতে অহংকার করে তারা অতি শীঘ্রই লাঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মু’মিন/গাফির, আয়াত নং ৬০)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ (الأعراف 55)
তোমরা তোমাদের রবকে ডাক কাকুতি মিনতি করে ও সংগোপনে। নিশ্চয়ই তিনি সীমা লংঘনকারীকে ভালোবাসেন না। (সূরা আরাফ, আয়াত নং ৫৫)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
3382 – حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَرْزُوقٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عُبَيْدُ بْنُ وَاقِدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عَطِيَّةَ اللَّيْثِيُّ، عَنْ شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيبَ اللَّهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ وَالكَرْبِ فَلْيُكْثِرِ الدُّعَاءَ فِي الرَّخَاءِ»: «هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ» — الترمذى
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেনঃ যে লোক বিপদাপদ ও সংকটের সময় আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ লাভ করতে চায় সে যেন সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দের সময় বেশি বেশি করে দু’আ করে। (আবু দাউদ, হাদীছ নং ৩৩৮২)
তাহকীকঃ ইমাম তিরমিযী (র.) বলেন, হাদীছটি গরীব (সহীহ’র একটি শ্রেণি) হযরত আলবানী (র.) বলেন, হাদীছটি হাছান।
3381 – حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مِنْ أَحَدٍ يَدْعُو بِدُعَاءٍ إِلَّا آتَاهُ اللَّهُ مَا سَأَلَ أَوْ كَفَّ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهُ، مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ» وَفِي البَابِ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، وَعُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ — الترمذى
হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রসূলুল্লাহ (স.)কে বলতে শুনেছি কোন ব্যক্তি (আল্লাহ তায়ালার কাছে) কোন কিছু দু’আ করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করেন কিংবা তার পরিপ্রেক্ষিতে তার হতে কোন অকল্যাণ প্রতিহত করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কোন গোনাহের কাজে লিপ্ত হওয়ার বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য দু’আ না করে। (তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৩৮১)
আলবানীর তাহকীকঃ হাদীছটি সহীহ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ (3)
আর তোমরা নিজেদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর (তওবা কর) তাঁর প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদের নির্দিষ্ট সময় .পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশি করে দিবেন। আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাকো, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের ভয় করি। (সূরা হুদ, আয়াত নং ৩)
“ইসতিগফার ও তওবা কর” এর অর্থঃ
واسألوه أن يغفر لكم ذنوبكم، ثم ارجعوا إليه نادمين
তোমরা তোমাদের কৃত গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং লজ্জিত হয়ে তাঁর কাছে ফিরে এসো। (মুয়াচ্ছার)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ (52)
আর হে আমার কওম! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর (ইসতিগফার কর)। অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ করো (তওবা কর) তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না। (সূরা হুদ, আয়াত নং ৫২)
“ইসতিগফার ও তওবা কর” এর অর্থঃ
ويا قوم اطلبوا مغفرة الله والإيمان به، ثم توبوا إليه من ذنوبكم،
হে সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ক্ষমা তালাশ কর আর তাঁর উপর ঈমান আন। এরপর তোমাদের কৃত গোনাহ থেকে তাঁর কাছে ফিরে এসো। (মুয়াচ্ছার)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ (53)
বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছো তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা যুমার, আয়াত নং ৫৩)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর-আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের মন্দ কাজগুলোকে মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে যার তলদেশ দিয়ে ঝরণা প্রবাহিত। (সূরা তাহরীম, আয়াত নং ৮)
রসূলুল্লাহ (স.) বলেন,
3818 – حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ بْنِ سَعِيدِ بْنِ كَثِيرِ بْنِ دِينَارٍ الْحِمْصِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عِرْقٍ، سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ بُسْرٍ يَقُولُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طُوبَى لِمَنْ وَجَدَ فِي صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا» — ابن ماجة
[تعليق محمد فؤاد عبد الباقي] في الزوائد إسناده صحيح رجاله ثقات. [حكم الألباني] صحيح
হযরত আবদুর রহমান ইবনে ইরক (র.) বলেন আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বুছর (রা.) কে বলতে শুনেছি যে, নবী কারীম (স.) বলেছেন, মহা সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যে তার আমলনামায় বেশি বেশি ইসতিগফার পাবে। (ইবনে মাযাহ, হাদীছ নং ৩৮১৮)
# মুহাম্মাদ ফুয়াদ আবদুল বাকী তার যাওয়ায়িদ কিতাবের মধ্যে বলেন হাদীছটি সহীহ এবং এই হাদীছের রাবীগণ সবাই ছিকাহ। আলবানী (র.) বলেন, হাদীছটি সহীহ।
রসূলুল্লাহ (স.) বলেন,
6307 – حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «وَاللَّهِ إِنِّي لَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي اليَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً» البخارى
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) বলেন আমি রসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর কছম! নিশ্চয়ই আমি প্রতিদিন সত্তরবারের অধিক আল্লাহর কাছে ইসতিগফার করি ও তওবা করি। (বুখারী শরীফ, হাদীছ নং ৬৩০৭)
রসূলুল্লাহ (স.) বলেন,
1515 – حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، وَمُسَدَّدٌ، قَالَا: حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنِ الْأَغَرِّ الْمُزَنِيِّ، – قَالَ مُسَدَّدٌ فِي حَدِيثِهِ: وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ – قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّهُ لَيُغَانُ عَلَى قَلْبِي، وَإِنِّي لَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ فِي كُلِّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ» — ابو داود
আগার আল মুযানী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কখনও কখনও আমার ক্বলবের উপরও আবরণ পড়ে। তাই আমি প্রতিদিন একশত বার করে আল্লাহর কাছে ইসতিগফার করি। (আবু দাউদ, হাদীছ নং ১৫১৫)
আলবানীর তাহকীকঃ হাদীছটি সহীহ।
(পাঁচ) দান-সাদাকাহ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ الْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِنْ كَأْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا (5) عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفْجِيرًا (6) يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا (7) وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا (8) إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا (9) إِنَّا نَخَافُ مِنْ رَبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا (10) فَوَقَاهُمُ اللَّهُ شَرَّ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَلَقَّاهُمْ نَضْرَةً وَسُرُورًا (11) وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا (12) مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا (13) وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا (14) وَيُطَافُ عَلَيْهِمْ بِآَنِيَةٍ مِنْ فِضَّةٍ وَأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَ (15) قَوَارِيرَ مِنْ فِضَّةٍ قَدَّرُوهَا تَقْدِيرًا (16) وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنْجَبِيلًا (17) عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا (18) وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَنْثُورًا (19) وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا (20) عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُنْدُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِنْ فِضَّةٍ وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُورًا (21) إِنَّ هَذَا كَانَ لَكُمْ جَزَاءً وَكَانَ سَعْيُكُمْ مَشْكُورًا (22)
নিশ্চয়ই সতকর্মশীলরা পান করবে কাফুর মিশ্রিত পান পাত্র থেকে। এটা একটা ঝরণা, যা থেকে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে। তারা একে প্রবাহিত করবে। তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং এমন দিনের ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট হবে সুদূর প্রসারী। তারা আহারের প্রতি মাহাব্বাত থাকা সত্ত্বেও অভাবগ্রস্ত এতীম ও বন্দীকে আহার দান করে। তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদেরকে আহার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। আমরা আমাদের রবের তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের ভয় রাখি। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে সেদিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে দিবেন সজীবতা ও আনন্দ এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমি (সিল্ক) পোষাক। তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না (অর্থাৎ এয়ারকাণ্ডিশান হবে)। তার বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং তার ফলসমূহ তাদের আয়ত্তাধীন রাখা হবে। তাদেরকে পরিবেশন করা হবে রূপার পাত্রে এবং স্ফটিকের মত পান পাত্রে। রূপালী স্ফটিক (ক্রাইস্টাল) পাত্রে, পরিবেশনকারীরা তা পরিমাপ করে পূর্ণ করবে। তাদেরকে সেখান থেকে পান করানো হবে যানজাবীল মিশ্রিত পান পাত্র (থেকে)। এটা জান্নাতস্থিত সালসাবীল নামক একটি ঝরণা। তাদের কাছে ঘোরা ফেরা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন, যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা। আপনি যখন সেখানে দেখবেন তখন নেয়ামতরাজি ও বিশাল রাজ্য দেখতে পাবেন। তাদের আবরণ হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করানো হবে রৌপ্য নির্মিত কংকণ এবং তাদের পালনকর্তা তাদেরকে পান করাবেন শারাবান তাহূরা। এটা তোমাদের প্রতিদান তোমাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃতি লাভ করেছে। (সূরা আদ দাহার/আল ইনসান আয়াত নং ৫-২২)
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
6 – حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، ح وحَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، قَالَ: أَخْبَرَنَا يُونُسُ، وَمَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، نَحْوَهُ قَالَ: أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ القُرْآنَ، فَلَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدُ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المرْسَلَةِ» — البخارى
হযরত ইবনে আব্বাছ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (.) সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল ছিলেন। রমাদানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জীবরীল (আ.) তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন। আর রমাদানের প্রতি রাতেই জিবরীল (আ.) তাঁর সাথে দেখা করতেন এবং একে অপরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। তখন রসূলুল্লাহ (স.) রহমাতের বাতাস থেকেও অধিক দানশীল হতেন। (বুখারী শরীফ, হাদীছ নং ৬)
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
1678 – حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ، وَعُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَهَذَا حَدِيثُهُ، قَالَا: حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ دُكَيْنٍ، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ: ” أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا أَنْ نَتَصَدَّقَ، فَوَافَقَ ذَلِكَ مَالًا عِنْدِي، فَقُلْتُ: الْيَوْمَ أَسْبِقُ أَبَا بَكْرٍ إِنْ سَبَقْتُهُ يَوْمًا، فَجِئْتُ بِنِصْفِ مَالِي، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَبْقَيْتَ لِأَهْلِكَ؟»، قُلْتُ: مِثْلَهُ، قَالَ: وَأَتَى أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ بِكُلِّ مَا عِنْدَهُ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَبْقَيْتَ لِأَهْلِكَ؟» قَالَ: أَبْقَيْتُ لَهُمُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ، قُلْتُ: لَا أُسَابِقُكَ إِلَى شَيْءٍ أَبَدًا — ابو داود
হযরত যায়িদ ইবনে আছলাম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন আমি হযরত ওমার ইবনে খাত্তাব (রা.)কে বলতে শুনেছি একদিন রসূলুল্লাহ (স.) আমাদেরকে দান সদাকাহ করার নির্দেশ দেন। ঘটনাক্রমে সেদিন আমার কাছে কিছু মালও ছিল। আমি মনে মনে বললাম আজ আমি আবু বকর (রা.) এর অগ্রগামী হবো। আমি আগে কখনও তাঁর আগে উঠতে পারিনি (তাই একদিনের জন্য হলেও আমি অগ্রগামী হব) কাজেই আমি আমার অর্ধেক মাল নিয়ে হাজির হলাম। রসূলুল্লাহ (স.) বললেন পরিবারের জন্যে কী রেখে এসেছো? আমি বললাম এর সমপরিমাণ। হযরত ওমার (রা.) বলেন হযরত আবু বকর (রা.) তার সমস্ত মাল নিয়ে উপস্থিত হলেন। রসূলুল্লাহ (স.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছো? তিনি বললেন আমি তাদের জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে রেখে এসেছি। আমি বললাম, আমি কখনই কোন বিষয়ে আপনাকে অতিক্রম করতে পারবো না। (আবু দাউদ, হাদীছ নং ১৬৭৮)
আলবানীর তাহকীকঃ হাদীছটি হাছান।
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
663 – حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ قَالَ: حَدَّثَنَا صَدَقَةُ بْنُ مُوسَى، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ قَالَ: سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الصَّوْمِ أَفْضَلُ بَعْدَ رَمَضَانَ؟ فَقَالَ: «شَعْبَانُ لِتَعْظِيمِ رَمَضَانَ»، قِيلَ: فَأَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «صَدَقَةٌ فِي رَمَضَانَ»: «هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ، وَصَدَقَةُ بْنُ مُوسَى لَيْسَ عِنْدَهُمْ بِذَاكَ القَوِيِّ» — الترمذى
হযরত আনাছ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম (স.)কে জিজ্ঞাসা করা হল রমাদানের পরে কোন সওম অধিক ফজিলাতপূর্ণ? তিনি বললেন, রমাদানের সম্মানার্থে শা’বানের সওম। আবার জিজ্ঞাসা করা হল, কোন সদাকাহ উত্তম? তিনি (স.) বললেন, রমাদান মাসের সদাকাহ। (তিরমিযী শরীফ, হাদীছ নং ৬৬৩)
# ইমাম তিরমিযী (র.) বলেন হাদীছটি গরীব।
# বছরের অন্যান্য সময়েও আমরা দানের হাত প্রশস্ত রাখব ইনশাআল্লাহ। বিশেষ করে রমাদানে এটাকে আরো বর্দ্ধিত করব।
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
2449 – حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ المُؤَدِّبُ قَالَ: حَدَّثَنَا عَمَّارُ بْنُ مُحَمَّدٍ، ابْنُ أُخْتِ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو الجَارُودِ الأَعْمَى وَاسْمُهُ زِيَادُ بْنُ المُنْذِرِ الهَمْدَانِيُّ، عَنْ عَطِيَّةَ العَوْفِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا مُؤْمِنٍ أَطْعَمَ مُؤْمِنًا عَلَى جُوعٍ أَطْعَمَهُ اللَّهُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ ثِمَارِ الجَنَّةِ، وَأَيُّمَا مُؤْمِنٍ سَقَى مُؤْمِنًا عَلَى ظَمَإٍ سَقَاهُ اللَّهُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنَ الرَّحِيقِ الْمَخْتُومِ، وَأَيُّمَا مُؤْمِنٍ كَسَا مُؤْمِنًا عَلَى عُرْيٍ كَسَاهُ اللَّهُ مِنْ خُضْرِ الجَنَّةِ»: «هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ مَوْقُوفًا، وَهُوَ أَصَحُّ عِنْدَنَا وَأَشْبَهُ» — الترمذى
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে মু’মিন কোন ক্ষুধার্ত মু’মিনকে খাদ্য খাওয়াবে আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামাতের দিন জান্নাতের ফল খাওয়াবেন।যে মু’মিন পিপাসার্ত কোন মু’মিনকে পানি পান করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামাতের দিন রাহীকুল মাখতুম (ইনটেক বোতল) থেকে পানি পান করাবেন। যে মু’মিন কোন বিবস্ত্র মু’মিনকে বস্ত্র পরিধান করাবে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সবুজ পোষাক পরিধান করাবেন। (তিরমিযী শরীফ, হাদীছ নং ২৪৪৯)
# ইমাম তিরমিযী (র.) বলেন, হাদীছটি গরীব।
রমাদান মাসের সদাকাহের মধ্যে ইফতারকেও শামিল করা যায়।
রসূলুল্লাহ (স.) বলেন,
807 – حَدَّثَنَا هَنَّادٌ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحِيمِ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ عَبْدِ المَلِكِ بْنِ أَبِي سُلَيْمَانَ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الجُهَنِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ، غَيْرَ أَنَّهُ لَا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْئًا»: «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ» — الترمذى
হযরত যায়িদ ইবনে খালিদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সায়িমকে (রোজাদারকে) ইফতার করাবে তার জন্য সায়িমের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। কিন্তু এটাতে সায়িমের সওয়াব থেকে বিন্দু মাত্রও সওয়াব কম করা হবে না। (তিরমিযী শরীফ, হাদীছ নং ৭০৮)
# ইমাম তিরমিযী (র.) বলেন, হাদীছটি হাছান, সহীহ। আলবানী (র.) বলেন, হাদীছটি সহীহ।
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
مَنْ فَطَّرَ فِيهِ صَائِمًا كَانَ مَغْفِرَةً لِذُنُوبِهِ وَعِتْقَ رَقَبَتِهِ مِنَ النَّارِ، وَكَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْتَقِصَ مِنْ أَجْرِهِ شَيْءٌ» ، قَالُوا: لَيْسَ كُلُّنَا نَجِدُ مَا يُفَطِّرُ الصَّائِمَ، فَقَالَ: ” يُعْطِي اللَّهُ هَذَا الثَّوَابَ مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا عَلَى تَمْرَةٍ، أَوْ شَرْبَةِ مَاءٍ، أَوْ مَذْقَةِ لَبَنٍ، وَهُوَ شَهْرٌ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ، وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ، وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ — صحيح ابن خزيمة
রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে রমাদান মাসে কোন সায়িমকে ইফতার করাবে তার গোনাহসমুহ মাফ হয়ে যাবে এবং সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। তার জন্য সায়িমের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব লেখা হবে এরজন্য সায়িমের কোন সওয়াব কম করা হবে না। সাহাবাগণ বললেন, আমাদের প্রত্যেকের সায়িমকে ইফতার করানোর মত সামর্থ্য নেই। তিনি (স.) বললেন, যে সায়িমকে একটি খেজুর বা এক ঢোক পানি কিংবা পানি মিশ্রিত একটু দুধ দিয়েও ইফতার করাবে আল্লাহ তায়ালা এই সওয়াব তাকেও দান করবেন। এটা এমন এক মাস যার প্রথম (দশক) রহমাত, মধ্য (দশক) মাগফিরাত বা ক্ষমা এবং শেষ (দশক) জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (সহীহ ইবনে হিব্বান)
# দান সদাকাহ, খাবার খাওয়ানো, ইফতার করানো, হাদীয়া পেশ করা এগুলো দ্বারা পরষ্পরের মাহাব্বাত সৃষ্টি হয়। আর এগুলো সব জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম।
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা মু’মিন না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে যেতে পারবে না। আর পরষ্পর মাহাব্বাত না করা পর্যন্ত (কামিল) মু’মিন হতে পারবে না। (শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৭২)
(ছয়) আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
2067 – حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي يَعْقُوبَ الكِرْمَانِيُّ، حَدَّثَنَا حَسَّانُ، حَدَّثَنَا يُونُسُ، قَالَ مُحَمَّدٌ هُوَ الزُّهْرِيُّ: عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ، أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ» — البخارى
হযরত আনাছ ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তার মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সাথে সদাচারণ করে। (বুখারী শরীফ, হাদীছ নং ২০৬৭)
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
5989 – حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي مُزَرِّدٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومَانَ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الرَّحِمُ شِجْنَةٌ، فَمَنْ وَصَلَهَا وَصَلْتُهُ، وَمَنْ قَطَعَهَا قَطَعْتُهُ» — البخارى
নবী কারীম (স.) এর সম্মানিতা স্ত্রী আম্মাজান আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (স.) বলেছেন, আত্মীয়তার হক হল রহমানের মূল। কাজেই যে তা সংরক্ষণ করবে, আমি তাকে সংরক্ষণ করব। আর যে তা ছিন্ন করবে, আমি তাকে (আমার থেকে) ছিন্ন করব। (বুখারী শরীফ, হাদীছ নং ৫৯৮৯)
(সাত) বেশি বেশি মাছজিদে অবস্থান করা
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
585 – حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الفَجْرَ قَعَدَ فِي مُصَلَّاهُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ»: «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ» — الترمذى
হযরত জাবির ইবনে ছামুরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম (স.) ফজরের সালাত আদায় করার পর সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত সালাতের স্থানে বসে থাকতেন। (তিরমিযী শরীফ, হাদীছ নং ৫৮৫)
# ইমাম তিরমিযী (র.) বলেন, হাদীছটি হাছান সহীহ। আলবানী (র.) বলেন, হাদীছটি সহীহ।
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
586 – حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاوِيَةَ الجُمَحِيُّ البَصْرِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ مُسْلِمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو ظِلَالٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى الغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ»، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ» هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ” وَسَأَلْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ: عَنْ أَبِي ظِلَالٍ؟ فَقَالَ: هُوَ مُقَارِبُ الحَدِيثِ، قَالَ مُحَمَّدٌ: وَاسْمُهُ هِلَالٌ ” — الترمذى
হযরত আনাছ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ফজরের সালাত জামায়াতে আদায় করে এরপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকির করে তারপর দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার একটি হাজ্জ ও উমরার সওয়াব হয়।হযরত আনাছ (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) বলেন, পূর্ণ একটি হাজ্জ ও উমরার সওয়াব, পূর্ণ একটি হাজ্জ ও উমরার সওয়াব, পূর্ণ একটি হাজ্জ ও উমরার সওয়াব।
ইমাম তিরমিযী (র.) বলেন, হাদীছটি হাছান গরীব।
আলবানীর তাহকীকঃ হাদীছ হাছান।
# এই আমলটি সারা বছরের জন্যে। রমাদানে আমলের সুযোগ বেশি। আমলের প্রতিবন্ধকতাও আল্লাহ তায়ালা উঠিয়ে নেন। কাজেই যদি এই মাসে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিতে পারি, হতে পারে আল্লাহ তায়ালা বাকি মাসগুলোতে এই অভ্যাস বহাল রাখবেন।
(আট) ই’তিকাফ
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
2044 – حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانٍ عَشَرَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ العَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا» — البخارى
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম (স.) প্রতি রমাদানে দশদিন ই’তিকাফ করতেন। অতঃপর যে বছর তিনি ইনতিকাল করেন সে বছর তিনি (স.) বিশদিন ই’তিকাফ করেন। (বুখারী শরীফ, হাদীছ নং ২০৪৪)
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
1781 – حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الْكَرِيمِ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أُمَيَّةَ قَالَ: حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ مُوسَى الْبُخَارِيُّ، عَنْ عُبَيْدَةَ الْعَمِّيِّ، عَنْ فَرْقَدٍ السَّبَخِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي الْمُعْتَكِفِ «هُوَ يَعْكِفُ الذُّنُوبَ، وَيُجْرَى لَهُ مِنَ الْحَسَنَاتِ كَعَامِلِ الْحَسَنَاتِ كُلِّهَا» — ابن ماجة
হযরত ইবনে আব্বাছ (রা.) থেকে বর্ণিত, ই’তিকাফকারী সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স.) বলেন, ই’তিকাফ গোনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সকল নেকী তার জন্য লেখা হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ১৭৮১)
# এই হাদীছের ছনদের মধ্যে একজন রাবী হলেন, ফারকাদ আছছাবাখী। ইবনে হাজার আসকালানী (র.) বলেন, “তিনি সত্যবাদী। হাদীছ গ্রহণের ব্যাপারে যাচাই বাছাই কম করতেন” তার কারণে এই হাদীছকে যয়ীফ বলা হয়। আল আজালী রাহ. বলেন, “তার হাদীছ গ্রহণ করতে কোন সমস্যা নেই”। আমলের ক্ষেত্রে এটা কোন প্রতিবন্ধক নয়।
# ই’তিকাফে থাকলে সময়ের সঠিক ব্যবহার করা বড় সহজ হয়। আমল করার সুযোগ হয় অনেক বেশি।হাত, মুখ, চোখসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যবহার হয় নিয়ন্ত্রিত। কদর তালাশ সহজ হয়।
(নয়) কদর তালাশ করা
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ (1)
নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে কদরের রাতে নাযিল করেছি। (সূরা কদর, আয়াত নং ১)
রসূলুল্লাহ (স.) বলেন,
1901 – حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ» — البخارى
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) নবী কারীম (স.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় কদরের রাতে জেগে ইবাদাত বন্দেগী করে তার পূর্ববর্তী গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাদানের সিয়াম পালন করে তার পূরববর্তী গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারী শরীফ, হাদীছ নং ১৯০১)
# নবী কারীম (স.) নিজেও কদর তালাশ করতেন এবং তাঁর (স.) পরিবার পরিজনকেও কদর তালাশের নির্দেশ দিতেন।
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
22713 – حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ مَوْلَى بَنِي هَاشِمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ سَلَمَةَ يَعْنِي ابْنَ أَبِي الْحُسَامِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَقِيلٍ، عَنْ عُمَرَ (2) بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّهُ: سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” فِي رَمَضَانَ فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، فَإِنَّهَا فِي وَتْرٍ: فِي إِحْدَى وَعِشْرِينَ، أَوْ ثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ، أَوْ خَمْسٍ وَعِشْرِينَ، أَوْ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ، أَوْ تِسْعٍ وَعِشْرِينَ، أَوْ فِي آخِرِ لَيْلَةٍ. فَمَنْ قَامَهَا ابْتِغَاءَهَا إِيمَانًا، وَاحْتِسَابًا، ثُمَّ وُفِّقَتْ لَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ ” (حديث حسن دون قوله: “أو في آخر ليلة” ودون قوله: “وما تأخر”، وهذا إسناد ضعيف،) — مسند احمد ط الرسالة
হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি রসূলুল্লাহ (স.)কে কদরের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। রসূলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমরা রমাদেনের শেষ দশকে খোঁজ কর। কেননা কদর বেজোড় সংখ্যার মধ্যে আছে। আর তা হল ২১, ২৩,২৫,২৭,২৯ এর রাত অথবা (রমাদানের) শেষ রাত। যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় কদরের রাত তালাশে জেগে ইবাদাত বন্দেগী করে এরপর সে পেয়েও যায় তার পূর্ব ও পরের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (মুছনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৬৭১৩)
(দশ) সম্ভব হলে রমাজানে ওমরা করা
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
1782 – حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَطَاءٍ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يُخْبِرُنَا يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِامْرَأَةٍ مِنَ الأَنْصَارِ، – سَمَّاهَا ابْنُ عَبَّاسٍ فَنَسِيتُ اسْمَهَا -: «مَا مَنَعَكِ أَنْ تَحُجِّينَ مَعَنَا؟»، قَالَتْ: كَانَ لَنَا نَاضِحٌ، فَرَكِبَهُ أَبُو فُلاَنٍ وَابْنُهُ، لِزَوْجِهَا وَابْنِهَا، وَتَرَكَ نَاضِحًا نَنْضَحُ عَلَيْهِ، قَالَ: «فَإِذَا كَانَ رَمَضَانُ اعْتَمِرِي فِيهِ، فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ حَجَّةٌ» أَوْ نَحْوًا مِمَّا قَالَ — البخارى
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রা.) বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) আনসারী এক মহিলাকে বললেন, কিসে তোমাকে আমাদের সাথে হাজ্জ করতে বাধা দিয়েছে? হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রা.) তার নাম বলেছিলেন কিন্তু আমি তার নাম ভুলে গিয়েছি। মহিলাটি বলল, আমাদের একটা পানি বহনকারী উট ছিল। এরপর অমুকের পিতা ও তার ছেলে অর্থাৎ ঐ মহিলার স্বামী ও ছেলে সেটাতে আরোহণ করে চলে গেছে আর আমাদের জন্য একটি পানি বহনকারী উট রেখে গেছে যেটাতে আমরা পানি বহন করি।নবী কারীম (স.) বললেন, যখন রমাদান আসে তখন উমরা পালন করিও। কারণ রমাদানের মধ্যে উমরা করা একটি হাজ্জের সমতুল্য। অথবা এমন কোন কথা বলেছেন। (বুখারী শরীফ, হাদীছ নং ১৭৮২)
# সওয়াবের দিক দিয়ে হাজ্জের সমতুল্য। তানাহলে উমরা কখনও ফরয হাজ্জের প্রতিনিধি বা বিকল্প হতে পারে না। (মুসতাফা আলবুগা)
# অনেকে বলেন ঐ আনসারী মহিলার নাম ছিল ছিনান।
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
939 – حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو أَحْمَدَ الزُّبَيْرِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا إِسْرَائِيلُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ الأَسْوَدِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ ابْنِ أُمِّ مَعْقِلٍ، عَنْ أُمِّ مَعْقِلٍ، عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «عُمْرَةٌ فِي رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً» وَفِي البَاب عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَجَابِرٍ، وَأَبِي هُرَيْرَةَ، وَأَنَسٍ، وَوَهْبِ بْنِ خَنْبَشٍ: ” وَيُقَالُ: هَرِمُ بْنُ خَنْبَشٍ “، قَالَ: بَيَانٌ، وَجَابِرٌ، عَنْ الشَّعْبِيِّ، عَنْ وَهْبِ بْنِ خَنْبَشٍ، وقَالَ دَاوُدُ الأَوْدِيُّ: عَنْ الشَّعْبِيِّ، عَنْ هَرِمُ بْنِ خَنْبَشٍ، وَوَهْبٌ أَصَحُّ، وَحَدِيثُ أُمِّ مَعْقِلٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الوَجْهِ، وقَالَ أَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ: قَدْ ثَبَتَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً»، قَالَ إِسْحَاقُ: مَعْنَى هَذَا الحَدِيثِ مِثْلُ مَا رُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ” مَنْ قَرَأَ: قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ فَقَدْ قَرَأَ ثُلُثَ القُرْآنِ — الترمذى
হযরত উম্মে মাকিল (রা.) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, রমাদান মাসের উমরা হজ্জের সমতুল্য।
— ইছহাক বলেন, এই হাদীছের তাৎপর্য সূরা ইখলাছ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স.) এর বর্ণিত হাদীছের অনুরূপ। রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুল হুয়াল্লাহু আহাদ সূরা তিলাওয়াত করল সে যেন কুরআন মাজীদের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করল। (তিরমিযী শরীফ, হাদীছ নং ৯৩৯)
আলবানীর তাহকীকঃ হাদীছটি সহীহ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন