যে চারটি বিষয় থেকে আশ্রয় না চেয়ে ঘর হতে বের হননি নবী কারীম (স.)

859 বার পড়া হয়েছে।

5094 – حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: مَا خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْتِي قَطُّ إِلَّا رَفَعَ طَرْفَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ» — ابو داود

হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘর থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে ফিরে এই দু’আটি না পড়ে কখনও বের হননি। দু’আটি হলঃ

اللَّهُمَّ أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ

ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই নিজে পথভ্রষ্ট হওয়া ও অন্যকে পথভ্রষ্ট করা থেকে। নিজে পদস্খলিত হওয়া এবং অন্যকে পদস্খলিত করা থেকে। নিজে কারো উপর জুলুম করা এবং অন্যের জুলুমের শিকার হওয়া থেকে। নিজে কারো উপর মুর্খতাসূলভ আচরণ করা  ও অন্যের মুর্খতাসূলভ আচরণের শিকার হওয়া থেকে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৫০৯৪)

আলবানীর তাহকীকঃ হাদীছটি সহীহ।

আনুষাঙ্গিক কথাঃ

قَالَ الطِّيبِيُّ: إِنَّ الْإِنْسَانَ إِذَا خَرَجَ مِنْ مَنْزِلِهِ لَابُدَّ أَنْ يُعَاشِرَ النَّاسَ، وَيُزَاوِلَ الْأَمْرَ، فَيُخَافُ أَنْ يَعْدِلَ عَنِ الصِّرَاطِ الْمُسْتَقِيمِ، فَإِمَّا أَنْ يَكُونَ فِي أَمْرِ الدِّينِ فَلَا يَخْلُو مَنْ يَضِلُّ أَوْ يُضَلُّ، وَإِمَّا يَكُونُ فِي أَمْرِ الدُّنْيَا فَإِمَّا بِسَبَبِ جَرَيَانِ الْمُعَامَلَةِ مَعَهُمْ بِأَنْ يَظْلِمَ أَوْ يُظْلَمَ، وَإِمَّا بِسَبَبِ الِاخْتِلَاطِ وَالْمُصَاحَبَةِ فَإِمَّا أَنْ يَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ، فاَسْتُعِيذَ مِنْ هَذِهِ الْأَحْوَالِ كُلِّهَا بِلَفْظٍ سَلِسٍ مُوجَزٍ، وَرُوعِي الْمُطَابَقَةُ الْمَعْنَوِيَّةُ وَالْمُشَاكَلَةُ اللَّفْظِيَّةُ، كَقَوْلِ الشَّاعِرِ:

أَلَا لَا يَجْهَلَنَّ أَحَدٌ عَلَيْنَا … فَنَجْهَلُ فَوْقَ جَهْلِ الْجَاهِلِينَا — مرقاة

হযরত তীবী র. বলেন, মানুষ যখন ঘর থেকে বের হয় তখন তাকে অবশ্যই মানুষের সাথে মেলামেশা কিংবা কোন কাজে নিয়োজিত হতেই হয়। এতে এই আশংকা থাকে যে, সে সীরাতে মুসতাকীম থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। কেননা হয়তবা সে কোন দ্বীনি কাজে নিয়োজিত হবে, তখন এই আশংকা থাকে যে, সে নিজে গোমরাহ হবে অথবা অন্যকে গোমরাহ করবে।

অথবা সে কোন দুনিয়াবী কাজে নিয়োজিত হবে। তখন মানুষের সাথে লেনদেনে জড়িত হওয়ার করণে নিজে কারো উপর জুলুম করে বসতে পারে অথবা অন্যের জুলুমের শিকার হয়ে যেতে পারে। এবং তাদের সাথে উঠা বসা করার কারণে ঘটনাক্রমে কারো প্রতি মুর্খতাসূলভ আচরণ করে ফেলতে পারে অথবা কারো মুর্খতাসূলভ আচরণের শিকার হয়ে যেতে পারে।  অতএব এসব কিছু থেকে খুবই সংক্ষিপ্ত ও সাবলিল ভাষায় আশ্রয় চাওয়া হয়েছে শাব্দিক ও অর্থগত সংঙ্গতির প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য করে।

ঐ চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী যেগুলো থেকে আশ্রয় চাইতেন দয়ার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)?

নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চেয়েছেন যেভাবে:

اللَّهُمَّ أَعُوذُ بِكَ  হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইঃ

(এক)  أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ নিজে পথভ্রষ্ট হওয়া ও অন্যকে পথভ্রষ্ট করা থেকে। হযরত তিবী (র.) বলেন, যদি কেউ দ্বীনি কাজে নিয়োজিত থাকে তবে সে নিজে গোমরাহ হওয়ার বা অপরকে গোমরাহ করার আশংকার মধ্যে থাকে। চারটি বিষয়ের মধ্যে এইটি মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বীনি কাজে নিয়োজিত বলতে আমরা সাধারণত কুরআন হাদীছ বা ফিকহের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়কে বুঝে থাকি।  যারা এই কাজে নিয়োজিত আছি তাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমরা যেন কখনও এই বিষয়গুলো অনুমান, অভিজ্ঞতার আলোকে সমাধান না দেই। প্রতিদিন আমরা যখন ঘর থেকে বের হব তখন আমরা এই দু’আটি পড়ব আর নিয়ত করব, দ্বীনি বিষয়ে এমন কোন কথা বলব না, যার দ্বারা আমি পথভ্রষ্ট হতে পারি বা অপরকে পথভ্রষ্ট করতে পারি। মানুষের স্বভাব যেন এমন হয়ে গেছে যে, সবাই চায় দ্বীনি বিষয়ে গবেষণা করতে বা কথা বলতে বা অপরকে শরয়ী সমাধান দিতে। এই কাজগুলো বড় ভালো। উদ্যোগও প্রশংসনীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে না জেনে বা সঠিক ও যথাযথ পদ্ধতির অনুসরণ না করে নিজে নিজে জেনে বুঝে আমরা এই কাজটি করতে উদ্যত হচ্ছি। অথচ ভাবার বিষয়, আমার এই কথার দ্বারা কেউ ভ্রষ্ট হচ্ছে নাতো? কিংবা আমি নিজেই ভ্রষ্টতায় পতিত হচ্ছি নাতো? নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর থেকে বের হতেই এই বিষয়টি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।

প্রায়শই দেখা যায় কুরআন হাদীছ বা কোন মাছআলার ক্ষেত্রে আমাদের আলোচনাগুলো সঠিক পদ্ধতিতে হচ্ছে না। মনগড়া কথা ভুলে হোক আর ইচ্ছায় হোক হয়েই যাচ্ছে। অথচ কুরআনের কোন আয়াত হোক বা হাদীছের কোন বর্ণনা হোক নিজের পক্ষ থেকে বানানোর কোন সুযোগই নেই। এর প্রত্যেকটি ইছলামকে বিকৃত সাধনকারি। যা জাহান্নামে নিয়ে যাবে। কুরআন রচনাতো দুরের কথা কুরআনের ব্যাখ্যা বা তাফছীরও যদি কেউ মনগড়াভাবে করে তবে তার সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন مَنْ قَالَ فِي القُرْآنِ بِرَأْيِهِ فَأَصَابَ فَقَدْ أَخْطَأَ অর্থাৎ “যে ব্যক্তি নিজের মত অনুযায়ী কুরআন প্রসঙ্গে কথা বলে, সে সঠিক বললেও অপরাধ করলো”  (সঠিক ব্যাখ্যা করলেও ভুল করলো) হুজুরে আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একদল বিশেষ আলিম-সাহাবা কুরআনের জ্ঞান ব্যতীত কুরআনের তাফছীর করার ব্যাপারে খুব কঠোর মত ব্যক্ত করেছেন।  সাহাবা (রা.) বা তাদের পরবর্তী অনুসরণীয় জন থেকে এমন কোন প্রমাণ মিলবে না যে, তারা কুরআনের ব্যাপারে কোন মনগড়া কথা বলেছেন বা জ্ঞান ছাড়া কুরআনের তাফছীর করেছেন অথবা নিজেদের থেকে কুরআন ব্যাখ্যায় অবতীর্ণ হয়েছেন। (তিরমিযী শরীফের এই হাদীছের ফুটনোট দেখার অনুরোধ থাকলো)

মনে রাখতে হবে কুরআনের আয়াত বা তার মধ্যে উপস্থাপিত উদাহরণ বা ঘটনা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা কাউকে হিদায়াত দান করেন আবার কাউকে গোমরাহ করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন يُضِلُّ بِهِ كَثِيرًا وَيَهْدِي بِهِ كَثِيرًا  অর্থাৎ এটা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা অনেককে গোমরাহ করেন, আবার অনেককে হিদায়াত দান করেন।  (সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৬)

হাদীছের বিষয়ে নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন مَنْ يَقُلْ عَلَيَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ   “ যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়” (বুখারী, হাদীছ নং ১০৯)

হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে সাহাবাদের (রা.) ভয়ঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিশেষ একজন সাহাবা হলেন হযরত আনাছ (রা.) তিনি হাদীছ বর্ণনা করতে খুব ভয়ের মধ্যে থাকতেন। তিনি বলেন,

قَالَ أَنَسٌ: إِنَّهُ لَيَمْنَعُنِي أَنْ أُحَدِّثَكُمْ حَدِيثًا كَثِيرًا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ تَعَمَّدَ عَلَيَّ كَذِبًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

তোমাদের কাছে অনেক হাদীছ বর্ণনা করতে আমাকে বাঁধা দেয় নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই কথাটি “যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। (বুখারী, হাদীছ নং ১০৮)

লক্ষনীয় হল, সাহাবা (রা.) অনেক কিছু জেনেও হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে কত ভয়ের মধ্যে ছিলেন আর আমরা না জেনে শুধু বর্ণনার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাই।

অদক্ষ লোক যদি ফাতাওয়া দেয় তার ক্ষেত্রে হুজুরে আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْزِعُ العِلْمَ بَعْدَ أَنْ أَعْطَاكُمُوهُ انْتِزَاعًا، وَلَكِنْ يَنْتَزِعُهُ مِنْهُمْ مَعَ قَبْضِ العُلَمَاءِ بِعِلْمِهِمْ، فَيَبْقَى نَاسٌ جُهَّالٌ، يُسْتَفْتَوْنَ فَيُفْتُونَ بِرَأْيِهِمْ، فَيُضِلُّونَ وَيَضِلُّونَ(7307)

আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যে ইলম দান করেছেন তা হঠাৎ করে উঠিয়ে নিবেন না বরং উলামাগণকে তাদের ইলমসহ উঠিয়ে নেওয়ার দ্বারা তা ছিনিয়ে নিবেন। তখন শুধু মূর্খ লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে।  তাদের কাছে ফাতাওয়া জিজ্ঞাসা করা হবে আর তারা তাদের মত (ধারণা) অনুযায়ী ফাতাওয়া দিতে থাকবে ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে এবং অপরকেও (যারা জিজ্ঞাসা করবে তাদেরকেও) গোমরাহ করবে।  (বুখারী, হাদীছ নং ৭৩০৩)

إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ العِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا(100)

নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের থেকে ছিনিয়ে ইলমকে উঠিয়ে নেন না বরং আলিমদেরকে মৃত্যুর দ্বারা ইলমকে উঠিয়ে নেন। এমনকি যখন কোন আলিম অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা মূর্খদেরকে (দ্বীনি বিষয়ে) নেতা (পণ্ডিত) বানিয়ে নিবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা (দ্বীনি বিষয়ের) ইলম ছাড়া ফাতাওয়া দিয়ে দিবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে অপরকেও গোমরাহ করবে। (বুখারী, হাদীছ নং ১০০)

# মোল্লা আলী কারী (র.) বলেন,“লোকেরা মূর্খদেরকে (দ্বীনি বিষয়ে) নেতা (পণ্ডিত) বানিয়ে নিবে”এই কথার অর্থ হল লোকেরা ইমাম, মুফতী ও শাইখ হিসাবে দ্বীনি বিষয়ে অনবগত লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা করবে।

এক্ষেত্রে আর একটি বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরী বরং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল, বর্তমানে আমরা অনেকে নিজে কুরআন, হাদীছ বা মাছআলার সমাধান দেই না কিন্তু কোন অদক্ষ আলেম বা নেটের ঠিকানা দিয়ে দেই। যেগুলো মনগড়া বা অনুমানভিত্তিক সমাধান দিয়ে থাকে। এখানেও খেয়াল রাখতে হবে যে, সেটাও কিন্তু গোমরাহের একটি রাস্তা আর তার জন্য দায়ী আমি।  কারণ আমি তাকে ঐ দিকে পরিচালিত করেছি। ঘর থেকে যখন বের হই তখন যেন এই বিষয়টিও লক্ষ রাখি।  আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি, ইয়া আল্লাহ! আমি যেন দ্বীনি বিষয়ে এমন কোন কথা না বলি, এমন কোন পরামর্শ কাউকে না দেই যার দ্বারা আমি গোমরাহ হই বা আমার কুরআন হাদীছের মনগড়া কথা, অনুমান ভিত্তিক বা অভিজ্ঞতার আলোকে কথা বা কোন পরামর্শ দ্বারা কেউ গোমরাহ হয়।

এই বিষয়গুলো সাধারণ লোক যারা ইছলামী আলোকে কথা বলতে চান তাদেরকেও যেমন লক্ষ্য রাখতে হবে অনুরূপভাবে যারা বিভিন্ন ওয়াজ-নসীহাত করেন, বয়ান পেশ করেন, কিতাবাদি লেখালেখি করেন তাদেরকেও অতি গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে আরো গুরুত্বের সাথে, যারা দ্বীনি শিক্ষার শিক্ষক। যারা দ্বীনি শিক্ষা দান করে থাকেন তাদের মুখাতাব মুলত তলিবুল ইলমগণ। এই পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থায় সিলেবাস হল কুরআন, হাদীছ ও তার থেকে নিসৃত রস ফিকাহ।  এই তলিবুল ইলমগণের কাছে যে আমানাত (কুরআন, হাদীছ ও ফিকাহ) পৌঁছানো হয় সেগুলো যদি বিকৃত বা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয় তবে এই “গোমরাহ করা ও হওয়া” কাজটি চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়তে থাকবে।  আপেক্ষিক বিচারে বরং এই দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিকে বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ তুলনামূলকভাবে তাদের কাছেই দ্বীনের বিষয়ে জানতে  মানুষ বেশি ঝুকে থাকে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করেন।  আমিন।

(দুই) أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ  নিজে পদস্খলিত হওয়া এবং অন্যকে পদস্খলিত করা থেকে।

হযরত তীবী র. বলেন, “যাল্লাহ” বলা হয় অনিচ্ছায় কোন গোনাহ হয়ে যাওয়াকে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চেয়েছেন যে, তাঁর থেকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেন কোন গোনাহ প্রকাশ না পায়।

(তিন) أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ  নিজে কারো উপর জুলুম করা এবং অন্যের জুলুমের শিকার হওয়া থেকে।

নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশ্রয় চেয়েছেন যে, তিনি মানুষের সাথে লেনদেন, আচার আচরণ করতে যেয়ে কারো প্রতি জুলুম না করে ফেলেন আর তাঁর প্রতিও যেন কেউ জুলুম না করেন।

(চার) أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ  নিজে কারো সাথে মুর্খতাসূলভ আচরণ করা ও অন্যের মুর্খতাসূলভ আচরণের শিকার হওয়া থেকে।  অর্থাৎ আমার সাথে যেন কেউ জাহেলের মত আচরণ না করে। আমাকে যেন কষ্ট না দেয়।

এর আরেকটি অর্থ হতে পারে “আমি যেন ভুলো না যাই। দ্বীনের কোন বিষয় যেন ভুলে না যাই। আল্লাহ তায়ালার হক কিংবা মানুষের হক যেন ভুলে না যাই। কিংবা সাথীদের সাথে লেনদেন বা মেশামেশির ক্ষেত্রে আমি যেন তাদের হক ভুলে না যাই। মানুষের সাথে যেন আমি জাহেলদের মত আচরণ না করি অর্থাৎ তাদেরকে যেন কষ্ট না দেই।

বিঃদ্রঃ গোমরাহ হওয়া, গোমরাহ করা, পদস্খলন হওয়া পদস্খলিত করা, জুলুম করা, মুর্খতা সুলভ ব্যবহার করা নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য অকল্পনীয় বিষয়। উম্মতের শিক্ষার জন্য তিনি এই দু’আ সদা সর্বদা করেছেন। ঘর হতে বের হলেই এই দু’আ পড়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে আমাদের জন্যে গোমরাহ হওয়া- গোমরাহ করা, পদস্খলন হওয়া – পদস্খলিত করা, জুলুম করা – জুলুমের শিকার হওয়া, মুর্খতা সুলভ ব্যবহার করা – মুর্খতা সুলভ ব্যবহারের শিকার হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা সদা সর্বদা লেগেই আছে। তাহলে আমাদের জন্য এই দু’আটির আমাল কত জরুরী একটু বিবেচনা করার দাবী থাকলো।  গুরুত্ব বিবেচনায় নিজেও আমাল করি অপরকেও আমালের দিকে ডাকি।  আল্লাহই সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত। তিনি যা চাবেন তাই হবে।  وَ مَا تَوْفِيْقِى اِلَّا بِالَّلهِ

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x