আয়াতের দ্বিতীয় নির্দেশঃ তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। মৃত্যুতো আল্লাহ তায়ালার একক অধিকারের মধ্যে। বান্দার এই ক্ষেত্রে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তোমরা মৃত্যুবরণ করো না। স্বাভাবিকভাবে দেখতে গেলে মনের মধ্যে যেন কিছু প্রশ্নের অবতারণা হয়। কিন্তু এই কথাটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে সেটা যদি আমরা বুঝতে পারি তবে সকল সংশয় দূর হয়ে যায়। তাফছীরে ইবনে আব্বাছের মধ্যে বলা হয়েছে, “তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না” এই কথাটির অর্থ হল, তোমরা মৃত্যু পর্যন্ত ইছলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো। অর্থাৎ সর্ব হালতে যেন ঈমানদারগণ ইছলামের হুকুম আহকামের উপর অটল থাকে, কখনও যেন ইছলামের হুকুম আহকাম লংঘন না করে আর এভাবেই যেন মৃত্যু এসে যায়। কারণ যে যেভাবে জীবন যাপন করে, তার মৃত্যু সাধারণত সেভাবেই হয় এটা বড় মুজাররাব কথা।
“তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না” এই আয়াতের আরেকটি অর্থ হতে পারে, ‘তোমরা আল্লাহ তায়ালার প্রতি সুধারণা পোষণ করে মৃত্যুবরণ করো’ যেমন মুছলিম শরীফের একটি হাদীছে এসেছে,
وحَدَّثَنِي أَبُو دَاوُدَ سُلَيْمَانُ بْنُ مَعْبَدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ عَارِمٌ، حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا وَاصِلٌ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَبْلَ مَوْتِهِ بِثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، يَقُولُ :لَا يَمُوتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلَّا وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللهِ عَزَّ وَجَلَّ — المسلم
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনছারী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (স.) কে তাঁর ওফাতের তিন দিন পূর্বে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ যেন আল্লাহ তায়ালার প্রতি সুধারণা পোষণ না করে মৃত্যুবরন না করে। (মুছলিম)
ইমাম আবু দাউদ (র) এই অর্থের একটি হাদীছ তার অমর গ্রন্থ আবু দাউদ শরীফের মধ্যে সহীহ ছনদের সাথে উদ্ধৃত করেছেন। (হাদীছ নং হল, ৩১১৩)
তাফছীরে খাযেনের মধ্যে এই আয়াতের অর্থ করা হয়েছে এভাবে, “তোমরা খাঁটি মু’মিন হয়ে যাও, সর্বদা ইছলামের উপর দায়েম থাকো। যেহেতু তোমার জানা নেই যে, কখন মৃত্যু এসে যায় এই জন্য সর্বদা খাঁটিভাবে আল্লাহ তায়ালার উপর বড় সুধারণা পোষণ করে ইছলামের উপর জমে থাকো।
তাফছীরে নাছাফীতে বলা হয়েছে, এই আয়াতের অর্থ এই নয় যে, তোমরা মৃত্যুবরণ করো না। (এটাতো কোন বান্দার এখতিয়ারে নেই) বরং এর অর্থ হল তোমরা এভাবে মৃত্যুবরণ করো না যে, তোমাদের আচার আচরণ, চলাফেরা, জীবন যাপন ইছলামের বাইরে হয়। বরং তোমাদের মৃত্যু যেন ইছলামের উপর হয়।
উদাহরণ, যেমন বলা হয় لا تصلّ إلا وأنت خاشع অর্থাৎ তুমি এমন অবস্থায় সালাত আদায় করো না যে তুমি বিনয়ী নও। এই কথার অর্থ এটা নয় যে তুমি সালাত আদায় করো না। বরং এর অর্থ হল তোমার সালাত আদায় যেন বিনয় বিবর্জিত না হয়। (তাফছীরে নাছাফী)
অনুরূপভাবে তোমার মৃত্যু যেন ইছলাম বিবর্জিত অবস্থায় না হয়। এমন যেন না হয় যে তোমার জীবন যাপন ইছলামের গণ্ডির বাইরে আর এমন অবস্থায় তোমার মৃত্যু এসে গেছে।
এর একটি অর্থ এমন যে, তোমরা সৎকর্মশীল হও এবং এর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকো যেন মৃত্যু ইছলামের উপরই হয়। (ইবনে কাছীর)
ইছলামের উপর মৃত্যু হবে কী করলে?
মহান আল্লাহ তায়ালার বিধান এমন যে, যে ব্যক্তি ভালো কাজের ইচ্ছা পোষণ করে, তিনি তাকে সেই কাজেরই তাওফীক দান করেন এবং ঐ কাজ তার জন্যে সহজ করে দেওয়া হয় এবং তাকে তার উপর অটল রাখা হয়। (ইবনে কাছীর)
ইছলামের উপর যেন আল্লাহ তায়ালা মৃত্যু দান করেন তার জন্য আমাদের সর্বদা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা এবং তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা সাধনা করা উচিত।
নেককার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার জন্য কুরআন এবং হাদীসে বর্ণিত দোয়া পড়তে পারি। নিচের দোয়া কয়টিও আমল করতে পারি-
(১) رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ
(২) رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
(৩) رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ
(৪)اَللَّهُمَّ إِنَّكَ أَنْتَ وَلِيِّي فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ (مسند احمد(