জয়ীফ হাদীছের শ্রেণিগুলোর দিকে গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে জয়ীফ হাদীছ ঢালাওভাবে পরিত্যাজ্য কিনা অথবা ঢালাওভাবে গ্রহযোগ্য কিনা। জয়ীফ হাদীছ বললেই বা নাম শুনলেই যেন আমরা নিজেদের পক্ষ্য থেকে হুকুম তৈরী করে নিজে গোমরাহ না হই বা অপরকে গোমরাহ না করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সীরাতে মুস্তাকিমের উপর অটল রাখুন।
(তিন) মু’দালঃ যে ছনদ থেকে পরপর দুই বা ততোধিক রাবী বাদ পড়েছে।
একটা উদাহরণ
مَالِكٌ؛ أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : لِلْمَمْلُوكِ طَعَامُهُ وَكِسْوَتُهُ بِالْمَعْرُوفِ. وَلاَ يُكَلَّفُ مِنَ الْعَمَلِ إِلاَّ مَا يُطِيقُ — موطأ مالك
এই হাদীছটি মু’দাল। কারণ এই হাদীছটিতে ইমাম মালিক (র.) এর পর হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) পর্যন্ত দুইজন রাবী বাদ পড়েছে। এই হাদীছে যে দুইজন রাবী বাদ পড়েছে সেটা আমরা আরেকটি হাদীছের ছনদ থেকে জানতে পারি। সেখানে আছে,
1685 – حَدَّثَنَا أَحْمَدُ قَالَ: نا أَحْمَدُ بْنُ حَفْصٍ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ: نا إِبْرَاهِيمُ بْنُ طَهْمَانَ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِلْمَمْلُوكِ طَعَامُهُ وَكِسْوَتُهُ، وَلَا يُكَلَّفُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا يُطِيقُ» — المعجم الاوسط
হুকুমঃ এটা মুরছাল হাদীছ থেকে নীচু স্তরের। মু’দাল এবং মুআল্লাক হাদীছের মধ্যে উমুম খুছুছ মিন অজহীন এর সম্পর্ক।
(চার) মুনকাতিঃ যে হাদীছের ছনদে ধারাবাহিকতা নেই। অর্থাৎ যে হাদীছের ছনদের মধ্যে কোন স্তরের (চাই প্রথম দিকে হোক, মাঝে হোক বা শেষ দিকে হোক) কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে হাদীছে মুনকাতি’ বলা হয়। এই দিক বিবেচনায় মুআল্লাক, মুরছাল এবং মু’দাল এই সবগুলো মুনকাতি’ এর অন্তর্ভুক্ত। তবে মুআল্লাক, মুরছাল এবং মু’দাল মুনকাতি’ এর অন্তর্ভুক্ত কিনা সে বিষয়ে মুতাকাদ্দিমীন এবং মুতাআখখিরীনদের মাঝে বিস্তর কথা আছে। একটি উদাহরণঃ
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ صَالِحِ بْنِ هَانِئٍ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ سَلَمَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ شَاذَانَ، قَالَا: ثنا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، قَالَا: ثنا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَنَا النُّعْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ يُثَيْعٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنْ وَلَّيْتُمُوهَا أَبَا بَكْرٍ فَزَاهِدٌ فِي الدُّنْيَا، رَاغِبٌ فِي الْآخِرَةِ، وَفِي جِسْمِهِ ضَعْفٌ، وَإِنْ وَلَّيْتُمُوهَا عُمَرُ فَقِوِيُّ أَمِينٌ، لَا يَخَافُ فِي اللَّهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ، وَإِنْ وَلَّيْتُمُوهَا عَلِيًّا فَهَادٍ مُهْتَدٍ، يُقِيمُكُمْ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
এই হাদীছটিতে মধ্যবর্তী একজন রাবী বাদ পড়েছে। আর তিনি হলেন শরীক। হযরত ছাউরী এবং আবু ইছহাকের মধ্য হতে তিনি বাদ পড়েছেন। কারণ এই হাদীছটি হযরত ছাউরী আবু ইছহাক থেকে শোনেননি। বরং তিনি শুনেছেন শরীক থেকে আর শরীক শুনেছেন আবু ইছহাক থেকে। কাজেই এখানে যে রাবীর ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে এই ছেদটি মুরছাল, মুআল্লাক ও মু’দালের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
হুকুমঃ উলামাদের নিকট হাদীছে মুনকাতি’ জয়ীফ। কারণ এখানে (ক) ছনদের ধারাবাহিকতা নেই। (খ) রাবী উহ্য থাকার কারণে তার হালতটি অজানা।
অপ্রকাশ্যভাবে রাবী বাদ পড়া দুই প্রকার (১) মুদাল্লাছ, (২) মুরছাল খফী।
(এক) মুদাল্লাছঃ যে হাদীছের রাবী নিজের প্রকৃত শায়েখের নাম না করে তার উপরস্থ অর্থাৎ শায়েখের শায়েখ এর নামে এভাবে হাদীছ বর্ণনা করে যে তিনি যেন নিজেই হাদীছটি শায়েখের শায়েখ এর নিকট থেকে শুনছেন; অথচ তিনি নিজে হাদীছটি উপরস্থ শায়েখের নিকট থেকে শোনেননি। এই হাদীছটিকে মুদাল্লাছ বলে। আর এমন করাকে তাদলীছ বলে। যিনি এমন করেন তাকে মুদাল্লিছ বলে। মুদাল্লাছ দুই প্রকারে হতে পারে। (১) তাদলীছুল ইছনাদ, (২) তাদলীছুল শুয়ুখ।
হুকুমঃ (ক) মুদাল্লাছ হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয় যে পর্যন্ত না তিনি একমাত্র ছেকাহ রাবী হতেই তাদলীছ করেছেন বলে সাব্যস্ত হয় এবং তিনি সেটা নিজ শায়েখের নিকট শুনেছেন বলে স্পষ্ট বলে দেন।
(খ) বড় বেশি অপছন্দনীয়। অনেকে এটাকে মিথ্যার সমগোত্রীয় বলেছেন।
(গ) তাদলীছুল তাছবিয়া খুব বেশি অপছন্দনীয়।
(ঘ) তাদলীছুশ শুয়ুখ এটা তাদলীছুল ইছনাদের চেয়ে একটু কম দোষনীয়।
(দুই) মুরছাল খফীঃ ঐ হাদীছ যার বর্ণনাকারী এমন ব্যক্তি থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন যিনি তার যামানায় হওয়া সত্বেও তার সাথে সাক্ষাত হয়নি।
উদাহরণঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ قَالَ: أَنْبَأَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ صَالِحِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ زَائِدَةَ، عَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : رَحِمَ اللَّهُ حَارِسَ الْحَرَسِ — ابن ماجة
এই হাদীছটি মুরছাল খফী। কারণ ওমার ইবনে আবদুল আযীযের (র.) উকবা (র.) এর সাথে সাক্ষাত ঘটেনি। (আতরাফের উদ্ধৃতি)
কোন হাদীছ মুরছাল খফী কিনা তা বোঝার উপায় হল, (ক) কোন ইমাম বলেছেন যে এই রাবী যার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন তাকে দেখেননি বা তার কাছ থেকে শোনেননি। (খ) ঐ রাবী হয়ত নিজেই বলে দিয়েছেন যে, তিনি যার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন তাকে দেখেননি বা তার কাছ থেকে হাদীছ শোনেননি।
হুকুমঃ এই হাদীছগুলোও জয়ীফের অন্তর্ভুক্ত। এটাকে হাদীছে মুনকাতি’ এর একটি প্রকার বলা যেতে পারে। যদি এই প্রকার থেকে ইনকিতা’ প্রকাশ হয়ে যায় তবে ঐ হাদীছটি হাদীছে মুনকাতি’ হিসাবে বিবেচিত হবে।
[…] প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন […]