আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُّوحَى
আর তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। আর কুরআন অহী যা প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নজম, আয়াত, ৩,৪)
হযরত রসূলুল্লাহ (স.) বলেন,
إِنَّ لِكُلِّ عَمَلٍ شِرَّةً، وَإِنَّ لِكُلِّ شِرَّةٍ فَتْرَةً، فَمَنْ كَانَتْ شِرَّتُهُ إِلَى سُنَّتِي فَقَدْ أَفْلَحَ، وَمَنْ كَانَتْ شِرَّتُهُ إِلَى غَيْرِ ذَلِكَ فَقَدْ هَلَكَ».— صحيح ابن حبان
প্রত্যেক আমালের একটা তেজ বা উদ্দীপনা (গতি) আছে। আর প্রত্যেক উদ্দীপনার ক্রান্তিকাল বা সমাপ্তি আছে। যার আমালের গতি আমার সুন্নাতের দিকে হবে সে সফলকাম হবে আর যার গতি আমার সুন্নাতের বাইরে হবে সে ধ্বংস হবে। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ১১)
হাদীছটির ছনদ সম্পর্কে শুয়াইব আল আরনাউত এবং আলবানী বলেন, হাদীছটি সহীহ)
আমাদের উদ্দেশ্য হযরত রসূলুল্লাহ (স.) এর যাবতীয় আমালগুলো নিজে ও অপরে এক কথায় সবাই মিলে আমাল করা ও দুনিয়াতে কিয়ামাত পর্যন্ত আমালগুলো কি করে যিন্দা থাকে তার জন্য চিন্তা ফিকিরসহ সর্ব প্রকারের চেষ্টা সাধনা করা।
একটা বিষয় আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে যে, কোন একটা বিষয়ে রসূলুল্লাহ (স.) থেকে অনেকগুলো আমাল বর্ণিত আছে। যদি কোন একটা আমালের প্রতি আমাল করি তবে সেটা কম নয়। কিন্তু বিশেষ বিবেচনার বিষয় হল আমরা যদি নির্দিষ্ট একটা আমালকে জারি করি তবে বাকি আমালগুলো কি কোন দিন অস্থিত্ব লাভ করবে? যেমন ঘুমানোর সময়, মসজিদে প্রবেশের সময়, রুকুতে, দোয়া কুনুত ইত্যাদিতে। এ সমস্ত বিষয়ে হুজুরে আকরাম (স.) থেকে অসংখ্য আমাল বর্ণিত আছে। এমনিভাবে অন্যান্য বিষয়ে। একটির উপর আমাল করলে যথেষ্ট এটা আমরা অস্বীকার করি না। আমাদের দাবী হল বাকি আমালগুলো যদি কেউ না করে তবে এই আমালগুলো তো চিরদিন কাগজের পৃষ্ঠার উপরেই থেকে যাবে। কোন দিন আমালে পরিণত হবে না।
আর এই উদ্যোগ কোন অমুসলমান থেকে আশা করা যাবে না। এমনকি মুসলমান কিন্তু ধর্মীয় বন্ধন থেকে অনেক দূরে তাদের থেকেও আশা করা যাবে না। যতদিন তারা দ্বীন থেকে দূরে থাকবে। এই জন্য আল্লাহ তায়ালা যাদের দ্বীনের বুঝ দান করেছেন তাদের প্রতি আমার বিশেষ আহবান; দয়া করে দ্বিধা দ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে সবাই মিলে চেষ্টা করি রসূলুল্লাহ (স.) এর প্রতিটি আমাল, দোয়া, তরীকা সঠিক পদ্ধতিতে কি করে নিজের মধ্যে এসে যায় এবং তামাম দুনিয়ার প্রত্যেকটি উম্মাতে মুহাম্মাদী (স.) এর মধ্যে এসে যায় তার জন্য চিন্তা ফিকির ও সার্বিক কর্ম প্রচেষ্টা করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফীক দান করেন। আমীন, ইয়া রব্বাল আ’লামিন।
এখানে যে আমাল বা দোয়াগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর ছনদের ভিত্তি কেমন সেগুলো হাদীছ বিভাগে “হাদীছের শিক্ষা” নামক কলামে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য, আমাল ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে এবং সাথে সাথে হাদীছ ও তার ছনদের ভিত্তি তাহকীকসহ উল্লেখ থাকবে ইনশাআল্লাহ। পড়ার, আমাল করার ও প্রচার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ থাকলো।
দু’আ ১ (নিদ্রা ও জাগরণে)
اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
হে আল্লাহ আমি আপনার নামে মৃত্যুবরণ করি (ঘুমেই) এবং আপনার নামেই জীবিত হই (জাগ্রত হই)
الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহ তা’আলার যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দান করার পরে আবার যিন্দা করেছেন। আর তার কছেই সকলকে প্রত্যবর্তন করতে হবে।
দু’আ ২ (নিদ্রা ও জাগরণে)
بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
আপনার নামেই আমি মৃত্যু বরণ করি এবং জীবিত হই।
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
দু’আ ৩ (নিদ্রা ও জাগরণে)
اللهُمَّ بِاسْمِكَ أَحْيَا، وَبِاسْمِكَ أَمُوتُ
হে আল্লাহ আমি আপনার নামে জাগ্রত হই এবং আপনার নামে ঘুম যাই।
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَمَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
দু’আ ৪ (নিদ্রা ও জাগরণে)
اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ نَمُوتُ وَنَحْيَا
হে আল্লাহ আপনার নামেই আমরা ঘুমাই এবং জাগ্রত হই।
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
দু’আ ৫
اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ
হে আল্লাহ আমি নিজেকে আপনার কাছে সমর্পণ করলাম। আমার চেহারাকে আপনার দিকে ফিরালাম, আমার সকল বিষয়কে আপনার কাছে ন্যাস্ত করলাম, আমি আমার পার্শ্বদেশকে আপনার কাছে সঁপে দিলাম। আমি আপনার গযবের ভয়ে ভীত আর আপনার রহমাতের আশায় আশান্বিত। আপনি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই আর নেই কোন মুক্তি পাওয়ার স্থান। আমি আপনার নাযিলকৃত কিতাবের উপর ঈমান আনলাম এবং ঈমান আনলাম আপনার প্রেরিত রাসূলের উপর।
দু’আ ৬
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ، وَرَبَّ الْأَرْضِ، وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى، مُنَزِّلَ التَّوْرَاةِ، وَالْإِنْجِيلِ، وَالْقُرْآنِ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ ذِي شَرٍّ، أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ
হে আল্লাহ হে আসমান ও যমীনের রব হে সমস্ত কিছুর রব, হে দানা ফাটিয়ে অংকুর বাহিরকারী, হে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআন নাযিলকারী, আমি আপনার কাছে সকল অনিষ্টকারী জিনিসের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। এগুলো সব আপনারই কবজায়। আপনি প্রথম আপনার আগে কেউ নেই। আপনিই শেষ আপনার পরে কেউ নেই। আপনিই প্রাধান্য বিস্তারকারী আপনার উপরে কেউ নেই। আপনি বাতিন আপনি ছাড়া আর কেউ নাই।
দু’আ ৭
اللهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَرَبَّ الْأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى، وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، اللهُمَّ أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ، وَأَغْنِنَا مِنَ الْفَقْرِ
(বর্ধিত অংশের অনুবাদ) – হে আল্লাহ আমাদের ঋণ পরিশোধ করে দিন এবং আমাদেরকে দরিদ্রতা থেকে বাঁচান।
দু’আ ৮
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَكَفَانَا، وَآوَانَا، فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِيَ لَهُ، وَلَا مُؤْوِيَ
সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে আহার করিয়েছেন, পান করিয়েছেন, রক্ষা করেছেন, আশ্রয় দিয়েছেন। এমন অনেক আছে যাদের কোনো রক্ষাকারী নেই এবং তাদের কোনো আশ্রয় দাতাও নেই।
দু’আ ৯
اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَجْمَعُ (تَبْعَثُ) عِبَادَكَ
হে আল্লাহ ওই দিন আমাদেরকে আপনার আযাব থেকে বাঁচান, যে দিন আপনি আপনার বন্দাগণকে একত্রিত করবেন (উঠাবেন)।
দু’আ ১০
بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ
হে প্রতিপালক! আপনার নামে আমি আমার পার্শ্বদেশ রাখলাম, আর আপনার নামেই আমি তা উঠাব। যদি আপনি আমার জান কব্জা করে নেন তাহলে তার উপর রহম করবেন। আর যদি পূনরায় তা ফিরিয়ে দেন তাহলে তাকে হিফাযাত করবেন, যেভাবে আপনি হিফাযাত করেন আপনার নেককার বান্দাদেরকে ।
দু’আ ১১
اللَّهُمَّ عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ
হে আল্লাহ হে দৃশ্য ও অদৃশ্যের একমাত্র খবর রাখনে ওয়ালা। হে আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকারী, হে সকলকিছুর রব এবং সকল কিছুর মালিক। আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে আপনি ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নাই। আমি আমার প্রবৃত্তির খারাবী থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি এবং আশ্রয় চাচ্ছি শয়তানের খারাবী থেকে ও তার শিরক থেকে।
দু’আ ১২
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ
আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নেই, তিনি এক; তাঁর কোনো শরীক নেই, বাদশাহী তারই, তারই সকল প্রশংসা, তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান, সকল শক্তি সামর্থের উৎস একমাত্র তিনিই। আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নেই, আল্লাহ সবচেয়ে বড়।