ইসলামে পোশাকের বিধিবিধান ও মূলনীতিঃ বুকে চাপা কান্না ও একরাশ বেদনা
(ক) বর্তমানে ব্যাপকভাবে প্রচলিত প্যান্ট শার্ট পরিধান করা ইছলামের দৃষ্টিতে কতটুকু সঙ্গত?
(খ) ইছলামী পোশাক বলে কোন পোশাক আছে কিনা?
(গ) লম্বা জামা, পায়জামা, টুপি, পাগড়ি এগুলোকে ইছলামী বা মুসলিম পোশাক বলা যাবে কিনা?
পোশাক সম্পর্কে কুরআনঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا بَنِي آَدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآَتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آَيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ (26)
হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজ-সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক, এটা সর্বোত্তম। এটা আল্লাহর কুরআনের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা আরাফ, আয়াত নং ২৬)
পোশাকের তিনটি শ্রেণিঃ (১) যা দ্বারা গুপ্তাঙ্গ আবৃত করা হয় (যা পরতেই হয়), (২) সাজ-সজ্জার ও প্রয়োজনীয় পোশাক, (৩) তাকওয়ার পোশাক যা সতর, পুরা শরীর, আকল ও আখলাক সংরক্ষণে উত্তম। (আইছারুত তাফাছীর)
এই তিনটির মধ্যে প্রথম পোশাকটি মানুষকে জন্তু-জানোয়ার থেকে আলাদা করে। জন্তু-জানোয়ার তাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে না। আর মানুষ তা আবৃত করে। তবে লজ্জাস্থান শরীরের কোন অংশকে বলা হবে এটা বোঝার প্রয়োজন আছে। সাধারণ কথায় আমরা যেটাকে লজ্জাস্থান বলে থাকি অর্থাৎ যৌনাঙ্গ শুধু এতটুকুই কি লজ্জাস্থান আর এতটুকু আবৃত করলেই কি মানুষ জন্তু-জানোয়ার থেকে পৃথক হয়ে যায়? বর্তমানে অনেকেই এমনটি বুঝে থাকেন। প্রথম দিকে এমন ধারণা শুধু পশ্চিমা অমুসলিমদের মধ্যে ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এতটুকু ঢাকার ব্যবস্থা আল্লাহ তায়ালা পশু-পাখিকে সৃষ্টিগতভাবেই দান করেছেন। কারো লজ্জাস্থানকে লেজ দ্বারা ঢেকে রেখেছেন, কারো লজ্জা স্থানকে এমন জায়গায় স্থাপণ করেছেন যেটাকে সরাসরি দেখা যায় না। যাইহোক, মানুষের লজ্জাস্থান কতটুকু অংশকে অন্তর্ভূক্ত করে এটা নির্ধারিত হবে কুরআন ও হাদীছের দ্বারা। বিশেষ করে একজন মুসলমানের। এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অভিধান দেখলে হবে না।
কুরআন ও হাদীছের আলোকে একজন পুরুষের সতর হল, নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত অংশ। আর মহিলার সতর হল পুরা শরীর। সালাতের সময় হাতের তালু ও চেহারা এই সতরের বাইরে। (বিস্তারিত সম্মানিত মুহাক্কিক আলিমগণের নিকট থেকে জেনে নেওয়া যেতে পারে)
দ্বিতীয় প্রকার পোশাক অর্থাৎ সাজ-সজ্জার পোশাক। এই পোশাক হল মানব জীবনের দর্পণ। এই পোশাকের উপর নির্ভর করে একটি জাতির পরিচয়। ভৌগলিক অবস্থান, ধর্মীয়, রাজনৈতিক পরিচয় এই পোশাকের দ্বারা জানা যায়। সাধারণভাবে বলা যায়, ইছলামের মধ্যে এই পোশাকটির কোন সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান নেই। তবে কিছু নীতিমালা আছে। কোন পোশাক এই নীতিমালার অধীন হলে তা গ্রহণযোগ্য আর এই নীতিমালার বিপরীত হলে তা পরিতাজ্য। প্যান্ট-শার্ট এই দ্বিতীয় প্রকার পোশাকের অন্তর্ভূক্ত। কাজেই পোশাকের নীতিমালাগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা জানতে পারবো শার্ট-প্যান্ট ইছলামে অনুমোদিত কিনা?
ইসলামে পোশাকের বিধিবিধান ও মূলনীতিঃ
(১) পোশাক হারাম উপায়ে অর্জিত টাকা দ্বারা হবে না।
(২) পুরুষের পোশাক রেশম হবে না।
(৩) সে পোশাক সতর ঢাকার মত হবে। অর্থাৎ শরীরের যতটুকু অংশ সতর- এ পোশাকের মাধ্যমে সে অংশ যথার্থ পদ্ধতিতে ঢেকে থাকবে।
(৪) মহিলাদের পোশাক পুরুষ পরবে না আর পুরুষদের পোশাক মহিলা পরবে না।
(৫) পোশাকের নীচের অংশ টাকনুর নীচে হবে না।
(৬) অহংকার প্রকাশ হবে না।
(৭) অপচয় হবে না।
(৮) পোশাকের দ্বারা কাফির বা অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য বিধান করা হবে না।
এবার বিচার করা যাক, এই নীতিমালার অধীনে প্যান্ট–শার্ট ও লম্বা জামা, টুপি পাগড়ির শরয়ী অবস্থান। প্রথমে প্যান্ট-শার্টের আলোচনাঃ
(ক) প্যান্ট-শার্ট কখন থেকে চালু হয়ঃ শার্ট মূলত সতের শতকের আবিষ্কার।
(খ) আবিষ্কারক কে বা কারা? ইউরোপীয়ান অমুসলিমগণ পোশাকের আবিষ্কারক।
(গ) ভোক্তা কারা বা কাদের জন্য পোশাকটি তৈরী করা হয়ঃ নারী-পুরুষ উভয়েই এর ভোক্তা এবং উভয়ের জন্য তা তৈরী করা হয়। কোথায় পাবো শার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত কথা?
শার্টের বিস্তারিত কথা জানতে আমরা কয়েকটি বই দেখতে পারি। যেমন,
- Hardy Amies. A, B, C’s of Men’s Fashion. London: Cahill and Co. Ltd, 1964.
- Byrde, Penelope. The Male Image: Men’s Fashion in England 1300-1970. London: B. T. Batsford, Ltd., 1979.
- Chenoune, Farid. A History of Men’s Fashion. Paris: Flammarion, 1993.
- De Marley, Diana. Fashion for Men: An Illustrated History. London: B.T. Batsford, Ltd., 1985.
- Keers, Paul. A Gentleman’s Wardrobe. London: Weidenfield and Nicolson, 1987.
- Roetzel, Bernhard. Gentleman: A Timeless Fashion. Cologne: Konemann, 1999.
- Schoeffler, O. E., and William Gale. Esquire’s Encyclopedia of 20th Century Fashions. New York: McGraw-Hill, 1973.
এই বইগুলোর উপাত্তের ভিত্তিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে পারিঃ
(১) Shirts appeared first in European dress in the seventeenth century
সতের শতকে ইউরোপিয়ান পোশাক হিসাবে প্রথমে শার্ট প্রদর্শিত হয়। (শার্টের সূচনাই আঞ্চলিক পোশাক হিসাবে)
(২) By the early eighteenth century, shirts had assumed importance as garments in their own right.
আঠার শতকের প্রথমদিকে পোশাক হিসাবে শার্ট তার অধিকার দখল করে নেয়।
(শার্ট প্রবর্তণের এক শত বছরের মধ্যে তা অন্যান্য পোশাকের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে)
(৩)Before the middle of the nineteenth century, only those considered to be gentlemen could afford to wear white shirts
উনিশ শতকের মাঝামাঝির কিছু আগে শুধুমাত্র সাদা শার্ট ব্যবহারকারীদেরকে ভদ্রলোক হিসাবে বিবেচনা করা হত।
(যারাই সাদা শার্ট যোগাড় করা বা তা ব্যবহার করার সামর্থ্য রাখত তাদেরকেই ভদ্রলোক বিবেচনা করা হত। মানুষের মানবতার পরিচয় হল পোশাক, মানবীয় গুণাবলী মাথা থেকে মুছে গেল। ফলে অবৈধ টাকার মালিক তাদের বিশেষ “সাদা পোশাক” উপভোগ করার কারণে ভদ্রলোক হল। আর বৈধ টাকার মালিক সকল মানবিয় গুনাবলী নিয়ে সাদা পোশাক সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে অভদ্র বলে পরিচিত হল। খুব সম্ভব এই জন্য অনেক এলাকায় এখনও যারা প্যান্ট-শার্ট পরেন, যতই অভদ্র হোক না কেন তাদেরকে “ভদ্রলোক” বলা হয়। বড় পরিতাপ ও বেদনাদায়ক অধ্যায়ের সূচনা)
(৪) beginning in the late nineteenth century and enjoying great popularity beginning in the 1930s.
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বিশেষ করে ১৯৩০ সালের শুরুর দিকে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
(ধর্মীয় বন্ধনমুক্ত নিজের নফছের চাহিদার বহিঃপ্রকাশ ঘটল)
(৫) Many formerly exclusively male shirt styles have been adopted essentially unchanged for women’s wear in the late twentieth century.
বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, আগে একচেটিয়াভাবে যেটা পুরুষের শার্টের স্টাইল ছিল সেটা অপরিবর্তিতভাবে মহিলাদের পোশাকের মধ্যে সংযোজিত হল।
(প্রথম দিকেও শার্ট নারী-পুরুষের পোশাক ছিল কিন্তু ডিজাইনের মধ্যে একটু পার্থক্য ছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নারী-পুরুষের ডিজাইন একই হয় যায়)
প্রথম দিকে যে শার্ট ছিল পরবর্তীতে সেই শার্টের স্টাইলের মধ্যে পরিবর্তণ হতে থাকে। ১৮৭১ সালে Brown, Davis & Co কোর্টের স্টাইলে শার্টের প্রচলন শুরু করে। এই স্টাইলের শার্টে তখন বুকের পকেট যোগ করা হয়নি। এরপর কলম, সিগারেট রাখার জন্য বুক পকেটের সংযোজন করা হয়। Use of a shirt breast pocket to carry pens, cigarettes, and other paraphernalia can spoil the lines of the shirt.
এরপর বিংশ শতাব্দিতে এসে বর্তমান প্রচলিত শার্টের কিছুটা হলেও পূর্ণতা পায়। এই বিংশ শতাব্দিতেই মহিলা অঙ্গনে শার্টের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে যার প্রচলন প্রতিনিয়ত বাড়ছেই। গোড়াপত্তনে শার্ট ছিল নারী-পুরুষের পোশাক। মাঝে একটু টার্ন নিলেও বর্তমানে আবারও তা নারী-পুরুষের পোশাক। পশ্চিমাদেশগুলোতে নারী-পুরুষের পোশাক হিসাবে শার্টের ব্যাপক প্রচলন আছে। শার্ট আমাদের দেশেও যে শুধু যাত্রা শুরু করেছে এমন নয় বরং তা এখন সর্বোচ্চ গতিতে পৌঁছানোর দার প্রান্তে।
ঢালাওভাবে প্যান্ট-শার্টের প্রচলনে বড় একটা বাঁধা ছিল ধর্মীয় অনুশাসন। এই বন্ধনকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য যে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে (আল্লাহ মাফ করে) হয়তবা বিদেশিদের অতিক্রম করতে আমাদের বেশি সময়ের অপেক্ষা করতে হবে না।
লক্ষনীয়, পোশাকের নীতিমালার মধ্যে একটা হল, “মহিলাদের পোশাক পুরুষ পরবে না আর পুরুষদের পোশাক মহিলা পরবে না” যেভাবেই বিশ্লেষণ করা হোক না কেন প্যান্ট-শার্ট উভয়কে গুলিয়ে ফেলেছে। এই নীতির বিবেচনায় প্যান্ট-শার্ট ইছলামী সীমার মধ্যে থেকে বেরিয়ে যায়। পোশাকের আরেকটি নীতি হল, “পোশাকের দ্বারা কাফির বা অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য বিধান করা হবে না” এই নীতির দিক দিয়েও প্যান্ট-শার্ট ইছলামের গণ্ডির মধ্যে ঢুকতে পারে না। উল্লেখ্য, শার্ট-প্যান্ট ইয়াহুদ বা খ্রীষ্টানদের পোশাক নয় তবে এটা ইংরেজদের প্রবর্তিত পোশাক। যার প্রচলন অমুসলিম ইংরেজ তথা পশ্চিমাদের দ্বারা হয়েছিল।
ভারতীয় উপমহাদেশে প্যান্ট–শার্ট ও লম্বা জামাঃ
আমাদের উপমহাদেশে প্যান্ট-শার্ট মূলতঃ ব্যাপক আকার ধারণ করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে। পোশাকটি গ্রহণ বা চালু করেছিল (ক) ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিতগণ (খ) ইংরেজদের অধীনে সেবায় নিয়োজিত, চাকুরিরত ব্যক্তিবর্গ (গ) ধর্মে (ইছলাম বা হিন্দু) যারা তুলনামূলকভাবে একটু দূরে ছিল সেই ধরণের ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য আমাদের উপমহাদেশের পোশাক প্যান্ট-শার্ট নয়। ঠিক একইভাবে পায়জামা-পাঞ্জাবীও নয়। নীহারঞ্জন বা গোলাম মুরশিদ সাহেব (হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতি-গোলাম মুরশিদ) সহ সমাজবিজ্ঞানের বইগুলো তালাশ করলে দেখা যাবে, এই উপমহাদেশের মূল পোশাক ছিল নাভি থেকে নীচের দিকে ঝুলন্ত এক বিশেষ ধরণের পোশাক। পুরুষ ও মহিলাভেদে তার ঝুল একটু কম-বেশি হত। আর নাভি থেকে উপরের অংশ মহিলা ও পুরুষ সকলেরই নগ্ন থাকত। এরপর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাবে পোশাকের মধ্যে পরিবর্তন হতে থাকে।
বাঙালি ও ভারতীয় উপমহাদেশের পোশাক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অধ্যায়নযোগ্য কয়েকটি বইঃ
(ক) হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিঃ গোলাম মুরশিদ।
(খ) বঙ্গবাসীর অঙ্গবাসঃ পূর্ণেন্দু পত্রী। প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস্ লিমিটেড।
(গ) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা সমগ্র। (চতুর্থ খণ্ড) পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ)
(ঘ) নিহারঞ্জন।
টুপি পাগড়ি লম্বা পোশাকঃ
একসময় ইছলাম প্রচারক-প্রসারকগণ আমাদের দেশে আসেন। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উভয় দিক দিয়ে তাদের একটা প্রভাব বাড়তে থাকে। আমাদের দেশে টুপি, পাগড়ি ও লম্বা পোশাক মূলত তখন থেকেই চালু হতে থাকে। এই সময়টা ছিল সাহাবা (রা.) ও তার পরবর্তী যামানা। (অনেকে বলে থাকেন এই সময়টা ছিল বার শতকের গোড়ার দিকে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজির শাসনামল)
সাহাবা (রা.) পোশাক নির্বাচনে কোন দিকটি লক্ষ্য রাখতেন? পোশাক সহ সকল কৃষ্টি-কালচারে সাহাবা (রা.) গণ পরিবেশ-পরিস্থিতি, ভৌগলিক, আবহাওয়া এই দিক বিবেচনা করতেন না বরং তাঁরা বিবেচনা করতেন, “আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত বা পছন্দনীয় কৃষ্টি-কালচার। বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কী পোশাক ছিল, তিনি কোন পোশাক ব্যবহার করতেন বা তিনি কোন পোশাক পছন্দ করেছেন” এই দিকটি বিবেচনায় এনে সাহাবা (রা.) গণ তাদের ইবাদাত-বন্দেগী, অভ্যাস-রুচি, চাল-চলন ঢেলে সাজিয়ে নিয়েছিলেন।
এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করতেই হয় যে, সাহাবা (রা.) সকলেই আরবের (বর্তমান সৌদি আরবের) ছিলেন না বরং অনেকেই ছিলেন হাবশার, শামের (সিরিয়া) পারস্যের (ইরানের) বা অন্য এলাকার। এরপর তৎপরবর্তী যামানা (তাবিয়ীন ও তাবি তাবিয়ীন) ছিল মাশহুদ। তাদের মডেল হিসাবে উল্লেখ করেছেন খোদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই তাবিয়ীন ও তাবি তাবিয়ীনগণও সকলে যেমন ছিলেন না আরব (সৌদী) ভূখণ্ডের আবার তেমন সকলে ছিলেন না আরবী ভাষীও। পোশাকের ব্যাপারে তারাও শুধুমাত্র সুন্নাত-ওয়াজিবের দিকটি লক্ষ্য করেননি। আবহাওয়া-পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনা না করে সরাসরি দেখেছেন আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন পোশাক ব্যবহার করেছেনঃ তা লম্বা চওড়া কেমন ছিল, রং কেমন ছিল ইত্যাদি বিষয়কে। ফরয-ওয়াজিব এটাতো তাঁরা আবশ্যিকভাবে মেনে চলেছেন এ ছাড়া কোন বিষয় যদি “ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব” শরীয়তের এই পরিভাষার মধ্যে না পড়ে তবে সে ক্ষেত্রেও তাঁরা মনে করতেন (লাক্বদ কানা লাকুম ফি রসূলিল্লাহি উসওয়াতুন হাছানা)
যাইহোক তাবিয়ীন ও তাবি তাবিয়ীনগণের কাছ থেকে যারা শিক্ষা নিয়েছেন তারাও তাঁদের (রহ.) মতই পোশাকসহ সকল কৃষ্টি কালচার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারে নিজেকে ঢেলে সাজিয়ে নিয়েছেন। আমাদের উপমহাদেশে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। যারা ঐ সকল সাহাবা (রা.) বা তার পরবর্তী দ্বীনের প্রচারক ও প্রসারকগণকে দেখেছেন, তাঁদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন বা তাঁদের অনুসরণ করেছেন তারাও এই সকল প্রচারক ও প্রসারকগণের মাধ্যমে, কুরআন-হাদীছ সম্পর্কে অবহিত হয়ে, নবীর (স) মাহাব্বাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুধুমাত্র সুন্নাত-মুস্তাহাব, জায়িয-নাজায়িয, আবহাওয়া-ভৌগলিক অবস্থা ইত্যাদি প্রশ্নের অবতারণা না করে সরাসরি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে পোশাক কৃষ্টি কালচারকে পরিবর্তন করে নেন।
লম্বা জামা, টুপি-পাগড়ির বিস্তৃতিঃ এই পোশাক ছিল বড় মার্জিত ও সৌন্দর্য মণ্ডিত। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিগণও এই পোশাককে গ্রহণ করে নেন। ফলে অমুসলিমগণও লম্বা জামা ও পাগড়ি ব্যবহার করা শুরু করে দেন। যা আজও বিভিন্ন পুরাতন সামাজিক বই এর মধ্যে পাওয়া যায়। হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের লোকগণ এটা সহজে গ্রহণ করতে পেরেছিলেন খুব সম্ভব এই জন্য যে, ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় একটা ঐতিহ্য ছিল, “সাম্প্রদায়িক সংঘাত মুক্ত জীবন যাপন”। সকলে মিলে আপন হয়ে বসবাস করা ভারতীয়দের ঐতিহ্য। ইংরেজরা এসে এই ঐক্যের মূলে কুঠারাঘাত করে। ফলে বিভিন্ন ধর্মের লোকদের মধ্যে সম্প্রিতি বিনষ্ট হয়। যাইহোক এভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশে পোশাকের মধ্যে পরিবর্তন আসে ও নিজেদের অশালীন পোশাকের পরিবর্তে মুসলমানদের শালীন পোশাক চালু হয়। এখনও পর্যন্ত যারাই ধর্মের দিকে আগ্রহশীল, কুরআন-হাদীছের প্রতি নিবেদিত প্রাণ তারাও শুধুমাত্র সুন্নাত-মুস্তাহাব বা আবহাওয়া-পরিবেশ, এইদিকে লক্ষ্য না করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী পোশাক ব্যবহার করেছিলেন এবং তাঁর (স.) অনুসারীগণ কী পোশাক ব্যবহার করেছেন সেদিকে তাকিয়ে এই লম্বা পোশাক, দাড়ি-টুপি ও পাগড়ি ব্যবহার করে থাকেন। সম্ভবত সেই জন্য এমন কোন আলেম, মুসলিম মনিষী দেখা যায় না যিনি এই পোশাক ব্যবহার করেননি কিংবা করেন না।
এই উপমহাদেশে লম্বা জামা, টুপি, পাগড়ির ব্যবহার আগে না প্যান্ট–শার্টের ব্যবহার আগে?
এই উপমহাদেশে প্যান্ট-শার্টের অনেক আগেই লম্বা জামা বা পাগড়ির ব্যবহার শুরু হয়। এমনকি প্যান্ট-শার্টের সূচনারও কয়েকশত বছর আগ থেকে এই উপমহাদেশে লম্বা জামা পাগড়ির ব্যবহার শুরু হয়। পোশাক সম্পর্কে প্রায় অভিন্ন দৃষ্টিতে তা চলে এসেছে ইংরেজ আমল পর্যন্ত। ইংরেজরা এসে তাদের পোশাক সংস্কৃতিকে চালু করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ এখানে নেই তবে হিন্দু-মুসলিমসহ উপমহাদেশের সকল অধিবাসীদের সেই চেপে রাখা ইতিহাস জেনে রাখার প্রয়োজন আছে। তাদের পদক্ষেপের মধ্যে দুই একটি বিষয় সংক্ষিপ্তাকারে না বললেই নয়।
(১) তাদের শাসনামলে সরকারী চাকুরিতে মুসলমানদের বঞ্চিত করা হত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালাতে ক্রমান্বয়ে তাদের পোশাক বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়। সরকার পরিচালিত কার্যক্রম ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো এই পোশাককে “সভ্যতা ও সম্মানের মাপকাঠি” হিসাবে বুঝতে থাকে। সরকারি কার্যক্রমে পোশাকের বিধি-বিধান ঝুলিয়ে রাখার কারণে হিন্দু ও মুসলমানদের একটি শ্রেণি ঐ প্রকারের “সভ্য ও সম্মাণিত” হতে সরকারের সাথে হাত মিলাতে ইংরেজ তথা বৃটিশদের পোশাক ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। শুরু হয় ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় শার্ট গ্রহণ ও প্রচলনের হিড়িক।
ইছলাম কখনও কাউকে জোর করে পোশাক গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি। কিন্তু ইংরেজরা বাধ্য করে। এখনও পর্যন্ত এই ধারার প্রতিষ্ঠান হোক আর সভা-সেমিনার হোক এই বিশেষ পোশাকের বাধ্য বাধকতা আমাদের উপর চেপে আছে। আমরা যখন ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে ও নব্বই’র দশকের প্রথম দিকে কলেজ (ঢাকা কলেজ) ও বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে) লম্বা জামা, টুপি, পাগড়ি নিয়ে ক্লাশ করেছি কখনও শিক্ষক, সহপাঠিসহ অনেকের বাঁকা দৃষ্টির কোপানলে পড়তে হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরের পোশাক: প্যান্ট-শার্ট পরার কারণে কাউকে এমন ধরণের কোপানলে পড়তে হত না।
(২) ইংরেজরা লম্বা পোশাকের সংস্কৃতি বিদায়ে বড় একটা বেদনাদায়ক অধ্যায়ের সূচনা করল। সেটা হল, ইতর, নীম্ন শ্রেণি যাদেরকে সমাজে ঘৃণা করা হয় এমন লোকদেরকে এই পোশাক পরাল। একদিকে সভ্য সাজতে আরেক দিকে নীম্ন শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হওয়া থেকে বাঁচতে হিন্দু-মুসলিম সকলেই ইংরেজদের প্রচলিত এই পোশাক গ্রহণ করতে শুরু করল।
(৩) ধর্মীয় বন্ধন যেন না থাকে সেজন্য তারা ধর্মীয় শিক্ষার উপর হামলা করল। ধর্মীয় শিক্ষা যদি না থাকে তবে জাতি ধর্মীয় অনুভূতি বিবর্জিত হবে। ফলে পোশাকের মত একটা বিষয় কারো চিন্তার মধ্যেও আসবে না। (এটা শুধু পোশাকের ক্ষেত্রে নয় বরং তা সার্বিক ক্ষেত্রে)
তারা বিশিষ্ট উলামা সহ মাদরাসা ধ্বংসের দিকে নজর দিল। পরে তাদের পৃষ্ঠ পোষকতায় যদিও মাদরাসা হয়েছিল কিন্তু সেটাতে ইছলামী মূল্যবোধ সংরক্ষণ করা হয়নি। সজাগ দৃষ্টিতে চোখ মেললেই এখনও তা অনুধাবন করা যাবে। একদিকে ধর্মীয় শিক্ষা ধ্বংস আরেকদিকে তাদের শিক্ষা উজ্জীবন। নিভু নিভু ভাবে যে ধর্মীয় শিক্ষা থাকল আর সেখান থেকে যারা শিক্ষা লাভ করল তারা সকল সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হতে থাকল। অপরদিকে পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিতরা সুযোগ সুবিধা লাভ করতে থাকলো। দুনিয়ার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পোশাকসহ অন্যান্য কৃষ্টি-কালচারে লোকেরা ইংরেজ সংস্কৃতি গ্রহনে ঝুকে গেল।
ইছলামী শিক্ষা আর আধুনিক শিক্ষা বা পশ্চিমা শিক্ষা বা ইংরেজী শিক্ষা যাই বলি না কেন তার মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য আছে। ঢালাওভাবে এই দুই শিক্ষাকে পারলৌকিক শিক্ষা ও জাগতিক শিক্ষা বলা না গেলেও এটা অবশ্যই ঠিক যে, আধুনিক শিক্ষার মূল হল, দুনিয়ার উন্নতি আর ইছলামি শিক্ষার মূল হল, আখিরাতের উন্নতি। ফলে দুনিয়ার উন্নতির জন্য যতকিছুর প্রয়োজন হয় সে বিষয়গুলো হল আধুনিক শিক্ষার সিলেবাস আর আখিরাতের উন্নতির জন্য যতকিছুর প্রয়োজন হয় সেগুলো হল ইছলামি শিক্ষার সিলেবাস। আধুনিক শিক্ষার মূল গ্রন্থ কি সেটা বলা না গেলেও ইছলামী শিক্ষার মূল গ্রন্থ কুরআন এটাতে কোন সন্দেহ নেই।
কুরআনের শিক্ষা হলঃ ওয়াল আখিরাতু খাইরুও ওয়া আবক্বা। অর্থাৎ তোমরা যদিও দুনিয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছ (কিন্তু জেনে রাখো) আখিরাতই হল অতি উত্তম ও চিরস্থায়ী। এই (শিক্ষা পূর্ববর্তী সহীফায় ছিল, ইব্রাহীম (আ.) ও মূছা (আ.) এর সহীফায়ও ছিল। (সূরা আ’লা, আয়াত নং- ১৬,১৭,১৮,১৯)
যে কোন কিছুর বিনিময়ে ইছলামী শিক্ষায় শিক্ষিতগণ ঐ উত্তম বস্তু পেতে আগ্রহী। এরজন্য দুনিয়ার যত কিছুই ত্যাগ করা লাগুক না কেন। ফলে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিতগণ এই শিক্ষার কৃষ্টি কালচার বুকে আঁকড়িয়ে ধরল। আর ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিতগণ ইংরেজদের কৃষ্টি কালচার বুকে জড়িয়ে ধরল। বলা যেতে পারে ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থা এই বিভাজন বা সংস্কৃতি পরিবর্তণে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে বা এখনও করছে। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যত বেশি ইংরেজী শিক্ষালয় ও সেই শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ বাড়ছে ততবেশি তাদের প্রবর্তিত ও প্রচলিত পোশাক-আশাকও সম্প্রসারিত হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন অজুহাতে ইছলামী শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যেও কতককে দ্বীনি শিক্ষালয় ও সেই শিক্ষায় শিক্ষিদের মধ্যেও ইংরেজ প্রবর্তিত পোশাক চালু করার একটা জোর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
ফাতাওয়া কি হবে সেটা পৃথক আলোচ্য বিষয়। তবে প্যান্ট-শার্টের প্রচলন রোধ করা আমার আপনার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চাহিদা। এগুলোর প্রচলন ও সম্প্রসারণ ঘটানো আমাদের গোলামীর ইতিহাসকে তাজা করারই একটি প্রচেষ্টা। সেই হিসাবে শুধু মুসলমান নয় গোটা ভারতীয়দের উচিত প্যান্ট-শার্টকে “না” বলা। মুসলমানদের দ্বারা লম্বা জামা পাগড়ি এসেছিল একথা ঠিক কিন্তু মুসলমান পোশাককে কেন্দ্র করে নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে, কারো হক বঞ্চিত করেছে, কোন ধর্মকে লাঞ্চিত করেছে এর কোন হদিস কেউ খুঁজে বের করতে পারবে না।
যাইহোক ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থা ও সেই শিক্ষায় শিক্ষিতদের রুচিবোধ পরিবর্তন হওয়ার কারণে প্যান্ট-শার্ট উপমহাদেশে তার স্থান সুসংহত ও মজবুত করতে পেরেছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুরা সহজে “ইংরেজ প্রবর্তিত পোশাকে”র পরিবর্তন মেনে নিতে পারলেও মুসলমানগণ তা সহজে মেনে নিতে পারেনি কেন?
হিন্দু ধর্মে সকল বিষয়ে কোন সমাধান নেই। এমনকি তার কোন বস্তুনিষ্ট ইতিহাস নেই। তাদের ধর্ম প্রবর্তকগণ কিছু পূজা-অর্চনা শিখিয়েছেন ঠিক কিন্তু সার্বিক কোন দিক নির্দেশনা শিখাতে পারেননি। এর বিপরীতে ইছলাম একটি সার্বিক জীবন ব্যবস্থা, complete code of life”
হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মে সকল প্রয়োজনের সমাধান সম্ভব নয়। সমাধানের জন্য অপরের নিকট ধর্না দিতে হয়। ইছলাম এর বিপরীত।
ইছলামের মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। যেমন ব্যক্তি জীবনের সমাধান, তেমনি সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তজার্তিক, সামরিক এমনকি পেশাব-পায়খানা, স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা, জুতা পরা ও খোলা, পোশাক পরিধান ও তা ত্যাগ “হাত্তাল খিরা”- ছোট থেকে ছোট, বড় থেকে বড় সকল বিষয়ের সমাধান। পোশাক গ্রহণ ও পরিবর্তনে হিন্দুরা যতটুকু স্বাধীন চেতা হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে মুসলমানেরা তা পারে না। কারণ মুসলমানদের পারলৌকিক উন্নতি, আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান স্বাধীন চেতার উপর নির্ভরশীল নয় বরং তা বন্ধনের উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى (40) فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى (41) {النازعات}
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডয়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে তার ঠিকানা হবে জান্নাত। (সূরা নাযিআত, আয়াত নং ৪০, ৪১)
أي المردى المهلك باتباع الشهوات {ايسر التفاسير}
জান্নাত প্রাপ্তি নির্ভরশীল মনের বিপরীত চলার উপর। পোশাকের ব্যাপারেও তারা এই নীতি অবলম্বন করতে ভোলেনি।
আরব ভূখণ্ড থেকে আগত ইছলাম প্রচারকগণ এবং উপমহাদেশের ইছলাম ধর্মের অনুসারীগণ এই অঞ্চলের পোশাক থাকতেও কেন লম্বা জামা, টুপি–পাগড়ি ব্যবহার করেছেন?
এর কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। যেমন,
(এক) তাদের কাছে কুরআন-হাদীছের মাহাব্বাত ছিল সকল মাহাব্বাতের উর্ধ্বে। এই জন্য নিজেদের পছন্দ-অপছন্দের চেয়ে কুরআন-হাদীছের মাহাব্বাতকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তম আদর্শ যেমন সালাতের মধ্যে থাকবে তেমন মুআমালাতের মধ্যে থাকবে তেমন থাকবে কৃষ্টি-কালচারের মধ্যে। তারা যেমন খুঁজেছেন সাওয়াব তেমন খুঁজেছেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার আদর্শ। তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুবহু অনুসরণ করতে চেয়েছেন। সবসময় ফরয, ওয়াজিবের প্রশ্ন করেননি। ফরজ-ওয়াজিবের সাথে সাথে লক্ষ্য রেখেছেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পছন্দ-অপছন্দ ও চিরাচরিত অভ্যাসের অনুসরণকেও।
ইসলামে পোশাকের বিধিবিধান ও মূলনীতি (২য় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন)